প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভারতে জনতা কারফিউ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে করোনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে কারফিউ জারির এ ঘোষণা দেন তিনি।
Advertisement
ভাষণে মোদি বলেন, রোববার থেকে দেশে জনতা কারফিউ কার্যকর হবে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশের প্রত্যেক নাগরিককে এই কারফিউ বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে।
ভারতে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মারা গেছেন অন্তত চারজন।করোনাভাইরাস মহামারির বিষয়ে মোদি বলেন, পুরো পৃথিবী এই মুহূর্তে বিশাল সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের চেয়েও বেশি দেশ আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা আতঙ্কের মুখোমুখি হয়েছে ১৩০কোটি ভারতীয়। প্রত্যেক ভারতীয় পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে এটা মনে হয়েছে যে, আমরা এই সঙ্কটে আক্রান্ত হয়েছি। মহামারিতে আমরা এখনও নিরাপদ আছি; এমন চিন্তা-ভাবনা করাটা ভুল। আমাদের প্রত্যেক ভারতীয়র সতর্ক হওয়া উচিত।
Advertisement
'আমি যখনই আপনাদের কাছ থেকে কিছু চেয়েছি, তখন আপনারা কখনই আমাকে হতাশ করেননি। আজ আমি আপনাদের কাছে কিছু চাইতে এসেছি। আমি আপনাদের কাছ থেকে কয়েক সপ্তাহ চাই। আমি আপনাদের সামনের দিনগুলো চাই। বৈশ্বিকভাবে করোনার কোনও নিরাময় নেই। এখন পর্যন্ত কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। করোনা যেসব দেশে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে; সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে নয়, বরং প্রথম কয়েকদিন পর এর বিস্ফোরণ ঘটেছে।'
তিনি বলেন, বিশ্বে যা ঘটছে তার সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করছে ভারত। করোনাভাইরাসের বিস্তারের লাগাম টানতে কিছু দেশ নাগরিকদের শনাক্ত করার পর বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। সেসব দেশের নাগরিকরা ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন।
ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ সাধারণ কোনও বিষয় নয়। ভারতে এর কোনও প্রভাব পড়বে না; এমন ধারণা ঠিক নয়। দুটি বিষয় অনুস্মরণ করা দরকার: সজাগ এবং সতর্ক।
মোদি বলেন, একেবারে প্রচণ্ড প্রয়োজন ছাড়া আগামী কয়েক সপ্তাহ বাড়ি থেকে বের হবেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আমাদের সকলে নিরাপদ থাকার জন্য এই সতর্কতা বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে দেশটির নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
নরেন্দ্র মোদি বলেন, রোববার সকাল সাতটা থেকে জনতা কারফিউ জারি হবে। জনতা কারফিউয়ের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রোগের বিস্তার ঠেকানোর জন্য জনতার দ্বারা, জনতার জন্য নিজেদের ওপর জারিকৃত কারফিউ। ওইদিন বিকেল ৫ টায় দেশের সব মানুষ জানালায়, দরজায় বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সাইরেন বাজাবেন। চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী, পরিবহনকর্মীর মত যেসব মানুষ নিজেদের প্রাণের তোয়াক্কা না করে মানুষের জন্য কাজ করছেন; তাদের ধন্যবাদ জানানো হবে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। চীনে এই ভাইরাসে সংক্রমণ একেবারে নিয়ন্ত্রণে এলেও বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
চীনের পর করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৯৭৮ জন। এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৮৪ জন মারা গেছেন ইরানে। অন্যদিকে, স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২০৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ৭৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সূত্র : এনডিটিভি।
এসআইএস/পিআর