করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির।
Advertisement
তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এর বাইরে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফারেন্সে রোগী এখানে আসেন। আউটডোরে চিকিৎসা নেন প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থী চমেক হাসপাতালে আসা-যাওয়া করেন। একটি করোনা রোগী যদি এখানে প্রবেশ করেন, তাহলে এখানকার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আপনারা জানেন, করোনায় ডেথ রেটিং বেশি না, ৩ থেকে ৪ শতাংশ মানুষ করোনায় মারা যান। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক হার্টের রোগী আছেন, আইসিইউতে আছেন অনেকে। এ অবস্থায় যদি একটা করোনা রোগী মারা যায়, তাহলে দেখবেন প্রতিদিন হাসপাতালে ৩০ থেকে ৪০ জন মারা যাচ্ছে। রোগী ও স্বাজনদের মধ্যে ফোবিয়া তৈরি হবে যাবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমার রিকোয়েস্ট থাকবে অল্টারনেটিভ ১০টি ভেন্টিলেটর করা হোক। এ ক্ষেত্রে রেলওয়ে হাসপাতাল সবচেয়ে ভালো হয়। সেখানে যদি আইসিইউ করতে হয় আমরা সহায়তা দেব, প্রয়োজনে ডাক্তাররাও সহায়তা করবেন।’
তার এই বক্তব্যের জবাবে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘একটি নতুন জায়গায় হঠাৎ করে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এখানে অক্সিজেনের বিষয় আছে, প্রয়োজন আরও বেশকিছু ইকুইপম্যান্ট।’
তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালকে পুরোপুরিভাবে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করার পরামর্শ দিলে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ সম্মতি দেন।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দরকিল্লায় অবস্থিত ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে পুরোপুরিভাবে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হবে। এর আগে হাসপাতালটির ১০০টি বেড ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল।
Advertisement
এ ছাড়া প্রথমে দুটি স্কুল ও পরে দুটি হোটেলকে কোরেন্টাইনের জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখন নগরের সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালকে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘চীনে যে হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল, পরে সে হোটেলটি পুরোই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় আমাদের হোটেল ভাড়া কে দেবে? তাই রেলওয়ে হাসপাতালকে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এ সময় চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, ঢাকার পর করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস হাসপাতালকে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিট ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক-নার্স কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসারে পার্সোনাল প্রটেকশন (পিপিই) পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে খোলা হয়েছে ‘ফ্লু কর্নার’। সর্দি, কাশি ও জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের প্রাথমিক সেবা এ কর্নারে দেয়া হবে।
জেডএ/জেআইএম