করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ সক্রিয় করার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এ আহ্বান জানান।
Advertisement
তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর ধারা ২-এর উপধারা (২) অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতিকে ‘আপদ’ এবং ধারা ২-এর উপধারা (১১) অনুযায়ী ‘দুর্যোগ’ ঘোষণা করা এবং ধারা ২২-এর উপধারা (১) অনুযায়ী ঝুঁকি প্রবণ এলাকাসমূহকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করে ধারা ৪-এর উপধারা (১) ও (২) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ সক্রিয় করার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে এই আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী ‘জাতীয় দুর্যোগ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন’ গঠন করা ও ধারা ১৪ অনুযায়ী ‘জাতীয় দুর্যোগ সাড়া দান সমন্বয় গ্রুপ’ গঠন ও কার্যকর করার পাশাপাশি ধারা ১৮-র উপধারা (১) ও (২) অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ে, বিশেষত সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও গ্রুপ সক্রিয় করার আহ্বান জানান তারা।
এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তারা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে যুক্ত আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক সংস্থা-এনজিওদের যুক্ত করে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা জোরদার করার আহ্বান জানান। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ জনপ্রশাসনের সকল পর্যায়ে সহায়তায় মাঠে নামার জন্য ধারা ৩০ ও ৩১ অনুযায়ী দেশের সুশৃংখল বাহিনীসমূহকে দ্রুত প্রস্তুত করার আহ্বান জানান জাসদ নেতৃদ্বয়।
Advertisement
তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা ৫৩-র উপধারা (১) অনুযায়ী বন্ধু রাষ্ট্র ও দেশ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাস টেস্টের কিটসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ-সরঞ্জাম সহযোগিতা হিসেবে গ্রহণের জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জনান।
জাসদ নেতৃদ্বয় জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা ৩৪ অনুযায়ী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করে ব্যাপক জনসচেতনামূলক প্রচারাভিযান জোরদার করতে হবে। সবার আগে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্বাস্থ্য সেবার সাথে যুক্ত পেশাজীবীদের প্রয়োজনীয় মাস্ক, অ্যাপ্রোন সরবরাহ করে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। করোনাসহ রোগবালাই প্রতিরোধে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনে দেশেই গবেষণা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবল দিয়ে জোরদার করতে হবে। এছাড়া জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক সুরক্ষা নীতি মেনে চলার আহ্বান জানান তারা।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারি রূপ ধারণ এবং বাংলাদেশেও কয়েকজন করোনা রোগী শনাক্ত, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু, মহামারি আকারে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের প্রথম দিকে বিমানবন্দরৈ কোনো স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই ছেড়ে দেয়া, পরবর্তীতে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে না রেখে হোম কোয়ারেন্টাইনের সুযোগ দেয়ায় তাদের নিজ ঘর-বাড়ি এলাকায় চলে যাওয়া, তাদের আত্মীয়-স্বজন-এলাকার মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা, করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতি, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্বাস্থ্য সেবা পেশাজীবীদের যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিটের মজুদের পরিমাণের অপ্রতুলতা, আইসোলেশন ইউনিটের অপ্রতুলতা, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে আতংক সৃষ্টি, ঔষধসহ নিত্যপণ্যের মজুতদারি-কালো বাজারি-মুনাফাখোরি জনমনে শুধু আতংকই সৃষ্টি করেনি, সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে।
এইউএ/এমএসএইচ/পিআর
Advertisement