জাতীয়

কলা যাদের জীবন-জীবিকা

পাহাড়িদের জীবিকার অন্যতম আয়ের উৎস কলা চাষ। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠির বেশির ভাগ লোকজন কলা চাষের ওপর নির্ভরশীল। জুম চাষ তাদের আদিম পেশা হলেও তা এখন বছরে একবার করে থাকে। কিন্তু কলা চাষে ফলন পাওয়া যায় বছর জুড়ে সব মৌসুমে। আর এ জন্য পাহাড়িরা বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে বেচে নিয়েছেকলা চাষ।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপকহারে কলার চাষবাদ হয়। বর্তমানে স্থানীয়দের কলা চাষে সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ফলে এখন কলার ফলন পাওয়া যাচ্ছে অধিক হারে। তবে দুর্গম এলাকায় বাজার জাতকরণের পর্যাপ্ত সুবিধা গড়ে না উঠায় উৎপাদিত কলার ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান কৃষকরা। সদরের বন্দুকভাঙ্গার সাধনমণি চাকমা বলেন, তাদের জীবিকা নির্বাহের মূল উৎস কলা চাষ। বছর জুড়ে কলার চাষাবাদ করে থাকেন তারা। প্রতি সপ্তাহে কলা বিক্রি করা যায় বাজারে। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ে চাষাবাদ করার কারণে উৎপাদিত কলা রাঙ্গামাটি শহরের বাজারে নিয়ে যাওয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে যায়। অনেক দূর পাহাড় বেয়ে কলা বহন এরপর নৌকায় করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এতো কষ্টের পরেও বাজারে অনেক সময় ন্যায্য দর মিলে না। ফলে কলার উৎপাদন বেশি হলেও অধিক আয় উপার্জন হয় না।  চাষিরা জানান, পাহাড়ে সবচেয়ে অধিক চাষ হয় দেশি প্রজাতি বা বাংলা কলা। এ বছর রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেশি প্রজাতি কলার ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। তবে কলা চাষের সঙ্গে মিশ্র ফসল চাষ করেন পাহাড়িরা। এর মধ্যে রয়েছে আদা, হলুদ, যব, মরিচ, ঠান্ডা আলু, চাল কুমড়া, ভুট্টাসহ নানা প্রজাতির শস্য-ফলাদি। কলা চাষ করে স্বাবলাম্বন অর্জন করেছেন স্থানীয় অনেক চাষি। কিন্তু উৎপাদিত কলার বাজারজাতকরণে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রায় সময় ন্যায্য দর পাচ্ছেন না তারা। সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় উৎপাদিত কলা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অনেকে আবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় কলার ব্যাপক ফলন হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন আর্থিকভাবে লাভবানও হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাঙ্গামটির তিনটি বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহের হাটের দিন ছাড়াও প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ট্রাক দেশি জাতের কলা বাজারজাত হয়ে থাকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতায় দেশিয় কলাচাষের উপযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। এদিকে, পার্বত্য অঞ্চলের সম্ভাবনাময় মিশ্র ফসল চাষে আধুনিক প্রযুক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মনে করেন কৃষকরা।অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় উৎপাদিত কলা নিয়ে চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে জানান, পার্বত্য অঞ্চলে চাষিরা দেশিয় কলার চাষ এখনও আদি পদ্ধতিতে করে যাচ্ছেন। ফলে কৃষকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। আবার দুর্গমতার কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাতকরণের অভাবে উপযুক্ত দামও মিলছে না।বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোর সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও উন্নত হয়নি। ফলে পরিবহনের অভাবে অনেক উৎপাদিত কলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবহন সুবিধার জন্য রাস্তা-ঘাটের অবস্থা উন্নত হলে স্থানীয় চাষীরা উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারবেন আরও সহজতরভাবে। এতে তারা পানে ন্যায্যমূল্য। আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারবেন চাষিরা। এ জন্য পাহাড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।সুমীল প্রসাদ চাকমা/এআরএ/আরআইপি

Advertisement