করােনাভাইরাস মােকাবেলায় ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস (এফডিএসআর)। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডাক্তারসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সারাদেশ থেকে চিকিৎসকরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আমাদের সঙ্গে যােগাযােগ করছেন। করােনাভাইরাস নিয়ে তারা খুব উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন বহির্বিভাগে অনেক জ্বরের রােগী দেখতে হয়, এরমধ্যে কারাে শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস আছে কিনা তা নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই। নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস বা কোনো পােশাকও নেই। দেশে কোভিড-১৯ সহ যে কোনো ভাইরাস রােগের ল্যাবরেটরি টেস্ট করার সুযােগ খুবই সীমিত। হাতে গােনা কয়েকটা ল্যাবরেটরিতে এই কনফার্মেটরি টেস্ট করা যায়। এছাড়া কোভিড১৯ ডিটেক্ট করার টেস্ট কিট দেশে এখনাে প্রয়ােজন অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত টেস্ট করার সুযােগ না থাকার কারণে দেশে করােনাভাইরাসের প্রকৃত অবস্থা জানা প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায় শুধু ডাক্তাররাই নন, পুরাে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীরাই কর্মক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। শুধু তাই নয় রােগীরাও বিপদে আছেন। কারণ ডাক্তারের মাধ্যমে অন্যান্য রােগীদের মধ্যে এই রােগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুর নূর তুষার বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্ব আজ জরুরি অবস্থার মধ্যে আছে। ইতোমধ্যে অনেক দেশ এই ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত। বাংলাদেশও বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, ইতোমধ্যে ভাইরাসবাহী কিছু মানুষ ও কয়েকজন রােগী শনাক্তহয়েছেন। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। করােনার প্রাদুর্ভাবে সবকিছু বন্ধ করা গেলেও হাসপাতালগুলাে বন্ধ করা যাবে না। ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী সকলকেই হাসপাতালে-চেম্বারে গিয়ে রােগী দেখতেই হবে, বরং তাদের দায়িত্ব আগের চাইতে এখন শতগুন বেশি।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে তাই ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রােগীদের চিকিৎসার্থে একটা প্রটোকল তৈরি করে অবিলম্বে সব ডাক্তারের কাছে পৌঁছানাের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে রােগ নির্ণয়ের পদ্ধতি চিকিৎসা ও রােগ সীমিতকরণের বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
Advertisement
ডা. আব্দুর নূর তুষার বলেন, স্বাস্থ্যখাতের বিদ্যমান বাস্তবতায় সন্দেহজনক রােগী (সাসপেক্ট কেস) আর নিশ্চিত রােগী (কনফার্মড কেস) কীভাবে চিহ্নিত করবেন সে ব্যাপারে একটা গাইডলাইন থাকা দরকার। কোভিড-১৯ রােগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে গাইডলাইন তৈরি করেছে। এই গাইডলাইনের আলােকে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ কর্তৃক চিকিৎসকদের জন্য একটা ট্রিটমেন্ট প্রােটোকল তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। প্রথমেই প্রতি জেলায় জেলায় করােনা বিষয়ক পরামর্শের জন্য হটলাইন টেলিফোন নম্বরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বর্তমানে আইইডিসিআরের যে কয়টি হটলাইন নম্বর আছে, তা প্রয়ােজনের তুলনায় অপ্রতুল। সবসময় নম্বরগুলাে এনগেজড পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার মতো প্রতি জেলা-উপজেলার হাসপাতালে একটা করােনা ওয়ার্ড বা কর্নার চালু করা উচিত, যেখানে সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রােগীরা চিকিৎসার জন্য যাবে।
তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে করােনা পরিস্থিতি মােকাবেলায় এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ডাক্তারসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটিতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এভাবে চললে দেশে যদি কোভিড-১৯ রােগীর সংখ্যা বাড়ে, তাহলে ডাক্তারসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীরা হুমকির মুখে পড়বে। যে কারণে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি সুস্থ না থাকে, নিরাপদ না থাকে তাহলে রােগীদের চিকিৎসা প্রদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিসের চেয়ারম্যান ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন, মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
এএস/এমএফ/এমকেএইচ
Advertisement