করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে ‘গো-আরক (গোমূত্র)’ খেয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা শিবু গরাই। তবে গোমূত্র তার শরীরে প্রতিষেধকের কাজ তো করেইনি, বরং গলা ও বুকে ব্যথা নিয়ে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
Advertisement
ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই ব্যক্তিকে জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে জায়গা মেলেনি শিবুর (৪২)। হাসপাতালের মেঝেতে তার চিকিৎসা চলছে। গোমূত্র খেয়ে অনুতপ্ত শিবু বলেছেন, ‘খুব ভুল করেছি। করোনা ঠেকাতে আমার মতো আর কেউ যেন গোমূত্র পান না করেন।’
আনন্দবাজার জানায়, ঝাড়গ্রাম শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের জামদা এলাকায় থাকেন শিবু। বাড়িতেই কাপড়ের দোকান রয়েছে তার। স্ত্রী, দুই ছেলে নিয়ে সংসার। কয়েকদিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে মায়াপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে সেখান থেকে ১৮০ টাকা দিয়ে কিনে আনেন গোমূত্রের শিশি। তাতে লেখা ‘গো-আরক’।
Advertisement
শিবু জানান, বিক্রেতা বলেছিলেন, এক থেকে দুই ছিপি ‘গো-আরক’ নিয়মিত খেলে শরীরের রক্ত দোষ কাটে। করোনাসহ নানা রকম শারীরিক ব্যাধি থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। করোনা-ভয় কাটাতে বিশ্বাস করেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক ছিপি গোমূত্রের আরক খেয়েছিলেন শিবু। তার পরেই শরীরে নানা অস্বস্তি শুরু হয়। গলা ও বুক জ্বলতে থাকে।
শিবুকে পরিবারের লোকজন নিয়ে যান ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। শারীরিক অবস্থা দেখে শিবুকে ভর্তি করে নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিবু বলেন, ‘পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাই আমার করোনা হলে ব্যবসা লাটে উঠবে-এমন আশঙ্কাতেই গোমূত্রের আরক খেয়েছিলাম। অন্ধবিশ্বাসে ভেবেছিলাম এই ভেবে যে, প্রতিষেধকের কাজ করবে। অসুস্থ হয়ে বুঝেছি কী ভুল করেছি।’
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, শিবুর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে। এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল।
Advertisement
ভারতে এ পর্যন্ত ১৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতামধ্যে তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় দেশজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এ ভাইরাস প্রতিরোধে বিশাল ‘গোমূত্র পার্টি’র আয়োজন করেছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।
শনিবার (১৪ মার্চ) দিল্লিতে দলটির সদর দফতরে ‘গোমূত্র পার্টি’ অনুষ্ঠিত হয়। পার্টিতে ২০০ মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং আয়োজকরা ভারতের অন্যান্য জায়গাতেও এমন পার্টি আয়োজন করবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক দাবি করে পুালশকে গোমূত্র পান গ্রেফতার হয়েছেন এক বিজেপি নেতা। একটা ঘটি থেকে ‘চরণামৃত’ বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে গোমূত্র পান করান তিন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার রাস্তায় টেবিল পেতে এখন গোবর এবং গোমূত্র বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি লিটার গোমূত্রের দাম ৪০০ টাকা; গোবরের কেজি ৫০০ টাকা। আগে যা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো। অনেক সময় তা এক দেড়শ টাকায়ও পাওয়া যেত।
তবে ষাঁড়ের মূত্রের দাম কিছুটা কম। ষাঁড়ের মূত্র প্রতি লিটার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে দোকানগুলোতে গোমূত্র এবং গোবর কেনার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। করোনা আতঙ্কের মাঝে অনেকেই নতুন করে এ ব্যবসা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডিসকাউন্টও দিচ্ছেন।
এসআর/এমকেএইচ