করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের কাছে নিত্যপণ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন সেখানকার দুই কলেজছাত্র। তারা ফলমূল ও অন্যান্য খাবারসামগ্রী কিনে নিউইয়র্ক বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরও ১ হাজার ৭০০ তরুণ স্বেচ্ছাসেবী।
Advertisement
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৮ হাজার ৯৬১ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বিদেশফেরত ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে যে অঞ্চলে করোনা আঘাত হেনেছে সেখানকার বাসিন্দাদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হচ্ছে। তেমনই একটি শহর নিউইয়র্ক।
এ রকম ক্রান্তিকালে শহরের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন নিউইয়র্কের দুই তরুণ-লিয়াম এলকিন্দ ও তার বন্ধু সিমোনে পলিকানো। লিয়াম ইয়েল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তারা তাজা তাজা ফল, শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ কিনে শহরের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
Advertisement
মানবসেবায় তাদের সঙ্গে যোগ দিতে অন্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই দুই যুবক। অবশ্য আহ্বানে যথেষ্ট সাড়াও পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে এ-সংক্রান্ত পোস্ট দেয়ার পর মাত্র তিন ঘণ্টা ব্যবধানে এক হাজার ৩০০ জন তাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ তারা একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ইনভিজিবল হ্যান্ডসডেলিভার ডটকম।
বর্তমানে এ গ্রুপে সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭০০ জনে। এখন নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে সেবা দিচ্ছেন তারা। ভবিষ্যতে বোস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিকো, ওয়াশিংটন ও লন্ডনে এ সেবা পৌঁছে দিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে ইনভিজিবল হ্যান্ডস।
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনওয়াই১-কে এলমন্ড বলেছেন, ‘মানুষ এখন এই মুহূর্তে একাকিত্ব বোধ করছে। আমরা সব স্বেচ্ছাসেবী তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের সারাটা দিন বাড়িতে থাকছে হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলার কেউ নেই। তাই আমরা তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাচ্ছি, আপনার দিন কেমন চলছে।’
‘লোকজন এখন ভীত এবং একাকিত্ব জীবনযাপন করছে। আমরা সবাই এমনভাবে বিচ্ছিন্ন যে, এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যে ঐক্য দরকার। এটাই মোক্ষম সময় এসব মানুষদের সংস্পর্শে যাওয়ার, যা তারা এই মুহূর্তে চাইছে’-যোগ করেন এই তরুণ।
Advertisement
তবে যেনতেনভাবে এসব লোকদের সংস্পর্শে যেতে পারবেন না গ্রুপের সদস্যরা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার সময়ই অবশ্যই তাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এমনকি কেনাকাটা করার সময় ও ডেলিভারি দেওয়ার সময় হাতে গ্লোভস পরে নিতে হবে সদস্যদের।
সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের জন্য কেনাকাটা করে বের হচ্ছেন লিয়ামট্রাম্প প্রশাসনের হাঁকডাকের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮১৪ জন, আর মারা গেছেন ৪১ জন।
এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২২৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫০ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১০৬ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
করোনা মোকাবিলায় প্রায় দুই মাসের জন্য সব ধরনের জনসমাগম বা অনুষ্ঠান বাতিলের পরমর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাজ্য ক্যাফে, বার ও রেস্তোরাঁয় জনসমাগত সীমিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৩২টি রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র : ডেইলি মেইল
এসআর/এমকেএইচ