করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শরণার্থী শিবির এবং অরক্ষিত অবস্থায় থাকা বাস্তুচ্যুত বা পথশিশু ও তাদের পরিবারকে সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন। বুধবার (১৮মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এ দাতা সংগঠনটি।
Advertisement
বিবৃতিতে তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত শিশু রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন কারণে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে সীমিত স্বাস্থ্যসেবা বা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবার বাইরে জনবহুল এলাকায় জীবনযাপন করছেন। শরণার্থী এবং বাস্তুচ্যুত শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা যথাযথভাবে না পাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল। এরা মারাত্মকভাবে এই ভাইরাসটিতে সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে শরণার্থী শিবিরে যেখানে সংঘাত বা যুদ্ধের কারণে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ পালিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে। সেখানে সেলফ আইসোলেশন কার্যত অসম্ভব। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সেখানে বিধ্বংসী পরিণতি বয়ে আনবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে তারা বলেন, বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে বসবাসরতদের প্রায় অর্ধেকই শিশু, আর সেখানে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার বা স্ক্রিনিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। এই দশ লাখ মানুষের জন্য নেই কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও।
Advertisement
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. শামীম জাহান বলেন, ‘যদিও বর্তমানে কক্সবাজারে কোভিড -১৯ এর কোনো কেস পাওয়া যায় নি। তারপরও আমরা প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ১৫ টি বেডের একটি আইসোলেশন ইউনিট রেখেছি। কোভিড -১৯ যদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তারপরও আমরা জীবন রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন আইসোলেশন ইউনিটের পাশাপাশি আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালিয়ে যেতে সক্ষম হব। তবে ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো সাধারণত বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করে এবং গর্ভবতী নারীদের মাতৃস্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে।’
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন, দ্য সেভ চিলড্রেন বিশ্বজুড়ে স্যানিটেশন এবং হাইজিনের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিচালনা করে এবং হ্যান্ড ওয়াশিং এবং সেলফ আইসোলেশনের মতো কোভিড -১৯ প্রতিরোধ বার্তা প্রচারণার জন্য কাজ করছে। এই কাজগুলো শেষ পর্যন্ত শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সংক্রমণ এবং তা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা প্রদান করবে। তবে তাদের এই কাজ সচল রাখতে আরও সমর্থন প্রয়োজন বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. যাইম হক বলেন, ‘কোভিড -১৯ একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সঙ্কট, যার জন্য সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের সকলের উচিত ভাইরাসটির বিস্তার রোধে কাজ করা। শরণার্থী শিবির এবং বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলোতে বিশেষভাবে কাজ করা উচিত যেখানে আইসোলেশন এবং টেস্টগুলো করা একটি চ্যালেঞ্জ। নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়া, কলেরাসহ ইতোমধ্যে অনেকগুলো রোগের বোঝা সেখানকার শিশুরা বহন করছে এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে পরিবারগুলোর যথেষ্ট কষ্ট করতে হচ্ছে।’
সেভ দ্য চিলড্রেন সরকারকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো আপস না করে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া শরণার্থী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে নতুন সংক্রমণ সংঘটিত হওয়া বন্ধ করতে হবে।
Advertisement
এমএফ/এমকেএইচ