চীন, সিঙ্গাপুর, ইতালি, স্পেন ও জার্মানিসহ করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসীদের যথাযথ কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংয়ে ব্যর্থ হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
Advertisement
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তদের মধ্যে ইতালি প্রবাসী দুজন এবং তাদের সংস্পর্শে আরও একজন আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে বুধবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ জন আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই প্রবাস ফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে (কন্ট্রাক্ট) আসা মানুষ।
রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে আলোচনা উঠলেই সবার প্রশ্ন 'কন্টাক্ট ট্রেসিং' আসলে কী? আইইডিসিআর কিভাবে এটা করে থাকে? কেনই বা অভিযোগ উঠছে যে আইইডিসিআর প্রবাস ফেরতদের যথাযথ কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
রোগ তত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে কোনো নাগরিক বাংলাদেশের প্রবেশের পর সংশ্লিষ্ট যাত্রীদেরকে জ্বর মাপার অত্যাধুনিক যন্ত্র থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ফ্লাইটে তাকে দিয়ে হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম (যে ফর্মে তিনি কোন দেশ থেকে এসেছেন, করোনার লক্ষণ-উপসর্গ আছে কিনা এবং অন্যান্য কী রোগে ভুগছেন সে সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত) পূরণ করা হয়। এছাড়া বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে একটি কার্ড দিয়ে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বাড়িতে গিয়ে তিনি যেন হোম কোয়ারেন্টাইন (নির্দিষ্ট একটি কক্ষে অবস্থান করা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা না করা, খাবার-দাবারের বাসন-কোসন গ্লাস ইত্যাদি পৃথক রাখা) এ থাকেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে প্রবাস ফেরতদের বাড়িতে অবস্থান করার কথা থাকলেও তা তারা শুনছেন না। তারা বাড়ির বাইরে হাটবাজারে এমনকি শ্বশুর বাড়ি এবং আত্মীয়-সজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রবাস ফেরত যাত্রীদের মধ্যে কেউ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে এ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পেতে সর্বনিম্ন দুই থেকে ১৪ দিন লেগে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও লক্ষণ ও উপসর্গ এমনটা নাও থাকতে পারে। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি কোথাও কাজে বা বেড়াতে গেলে তার মাধ্যমে অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। প্রবাস ফেরতরা যেন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন সেজন্য জেল-জরিমানা হবে বলেও জানানো হচ্ছে। তবুও টনক নড়ছে না তাদের।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জাগো নিউজকে জানান, বিদেশ ফেরতদের মধ্যে কারও করোনা ভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে বিশেষজ্ঞরা তাদের হাসপাতালে আইসোলেশন রেখে নমুনা পরীক্ষা করে থাকেন। নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলে ওই ব্যক্তির দেশে আগমনের দিন থেকে পরবর্তী চার দিন তার অবস্থান (তিনি কোথায় গেছেন, কার সঙ্গে মিশেছেন ইত্যাদি) তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখেন। এ পদ্ধতিকেই কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং বলা হয়।
গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, এখনও পর্যন্ত যে ১৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে তা কেবলমাত্র বিদেশ ফেরত যাত্রী ও তাদের স্বজন।
তিনি জানান, ‘তারা প্রবাস ফেরতদের নমুনা পরীক্ষার পাশাপাশি হাসপাতালে নিউমোনিয়া এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেসব রোগীদের মধ্যে কারও করোনা ভাইরাস ধরা পড়েনি। ফলে রোগ তত্ত্ব বিশ্লেষণে বলা যায় এখনও পর্যন্ত সামাজিকভাবে রোগটির সংক্রমণ ঘটেনি।’
Advertisement
তিনি বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে কাস্টমস ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিভিন্ন ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ লক্ষণ বা উপসর্গ নিয়ে আসলে দেশে আসার পর পূর্ববর্তী চারদিন তিনি কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে আক্রান্ত ব্যক্তির পাসপোর্টে যে নাম ঠিকানা দিয়েছেন বর্তমানে সেই ঠিকানায় তিনি নেই।
গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ ১৮ মার্চ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইইডিসিআর-এর ল্যাবরেটরিতে ৩৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১৪ জন শনাক্ত ও একজন মারা গেছেন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত সন্দেহে নমুনা পরীক্ষার জন্য আইসোলেশন রাখা হয়েছে ১৬ জনকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন চার রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। এদের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে ও একজন কুয়েত থেকে এসেছেন। অন্যজন তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।
এমইউ/এএইচ/এমকেএইচ