আন্তর্জাতিক

নাগরিকদের নগদ অর্থ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অর্থনীতি মন্দার মুখে

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত সাড়ে ছয় হাজার। ইতোমধ্যে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কংগ্রেসে পাস হয়েছে করোনা ত্রাণ তহবিল। এমন মুহূর্তে নাগরিকদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

Advertisement

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে সবচেয়ে খারাপ মাত্রায় ছড়ালে যুক্তরাজ্যে ৫ লাখের এবং যুক্তরাষ্ট্রে মারা যেতে পারে ২২ লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ১ লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যার ২৫ হাজার কোটি নগদ দেওয়া হবে।

লাখো কোটি ডলারের এই প্রণোদনা তহবিল থেকে ২৫ হাজার মার্কিন নাগরিকদে সরাসরি প্রদান করা হবে। দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে হোয়াইট হাউস। আলোচনা মূলত প্রত্যেক নাগরিককে কী পরিমাণ অর্থের চেক দেওয়া হবে এবং কারা অগ্রাধিকার পাবেন তা নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানচিন বলেছেন, করোনভাইরাসের কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে তা রোধে এই প্রণোদনা তহবিল। এর অংশ হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের সরাসরি অর্থ প্রদানকে তিনি সমর্থন করেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই চেক প্রদান শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Advertisement

গত সোমবার উটাহ রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি ঘোষণা করেন, প্রাদুর্ভাব চলাকালে আমেরিকান কর্মীদের প্রতি মাসে এক হাজার ডলার করে দেয়ার পরিকল্পনা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত ত্রাণ প্যাকেজ নিয়ে সিনেটে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি পদক্ষেপ নেব।’

তিনি বলেন, ‘যদি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী এবং ভেন্টিলেটর নাই হয়ে যায় তাহলে সেই একই আতঙ্ক কেমন হবে তা একবার ভাবুন। সংকট বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি যে কি হবে তাই ভাবছি। আগামী কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ কি ঘটবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস শুধু মানুষকে সংক্রমিত করেনি, ‘রোলার কোস্টার’ চালাচ্ছে শেয়ারবাজারসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার ওয়াল স্ট্রিট গত সোমবার ১২ পয়েন্টেরও বেশি হারিয়েছে—১৯৮৭ সালের পর শেয়ারবাজারটির লেনদেনে সবচেয়ে বাজে অবস্থা ছিল ওইদিন।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ১৫ দিনের নির্দেশনা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব নির্দেশনায় ১০ জনের বেশি জনসমাগম না হওয়া এবং স্কুল-রেস্তোরাঁ বন্ধের বিষয়ে বলা হয়েছে। ১৫ দিন পর এসব নির্দেশনায় পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার জরুরিভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করে আস্থা ফেরানোর জোর চেষ্টা চালালেও বিনিয়োগকারীরে এখনো আতঙ্কিত অবস্থায়ই রয়েছেন। ডিসেম্বরের শেষে চীনে প্রাথমিকভাবে মহামারিটির বিস্তার শুরু হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন ইউরোপকে করোনা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বর্ণনা করছে।

এদিকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অপিরাহার্য বেড, মাস্ক এবং ভেন্টিলেটর সংকটের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির হাসপাতালগুলো। চিকিৎসরা সব রোগীকে সেবা না দিতে পারার শঙ্কা কথা জানিয়ে বলছেন, রোগী বাছাই করে এখন তাদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করতে হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপির অনলাইন প্রতিবেদনে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এমন সংকটের খবর দিচ্ছে। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের সার্জন ও সহকারী অধ্যাপক থমাস টিসাই বলেছেন, ‘আপনি দেখছেন মুদি দোকানের তাকগুলো খালি হয়ে গেছে এবং টয়লেট পেপারের অভাবের কারণে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে।’

করোনা মোকাবিলায় প্রায় দুই মাসের জন্য সব ধরনের জনসমাগম বা অনুষ্ঠান বাতিলের পরমর্শ দিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাজ্য ক্যাফে, বার ও রেস্তোরাঁয় জনসমাগত সীমিত করা হয়েছে। অন্তত ৩২টি রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী দেড় লক্ষাধিক মানুষকে সংক্রমিত এবং ৭ হাজারের বেশি প্রাণ কেড়ে নেওয়া নভেল নামের করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। ভাইরাসটির সংক্রমণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে ভাইরাসটি ১১৬ জনের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে মাত্র ১০ লাখ বেড রয়েছে। প্রতি এক হাজার নাগরিকের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২.৮টি বেড। কিন্তু হাজারে এই সংখ্যাটা দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২.৩, চীনে ৪.৩ ইতালিতে ৩.২।

মার্কিণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক হিসাবে জানিয়েছে, মাঝারি ধরনের কোনো সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অন্তত ১ লাখ আইসিইউ বেড প্রয়োজন। আর সেটা যদি তীব্র হয় তাহলে সেই প্রয়োজনীয়তা গিয়ে ঠেকবে ২৯ লাখে। এদিকে করেনোয় আক্রান্ত ৫ শতাংশ রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করতে হচ্ছে।

এসএ/জেআইএম