জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শঙ্কিত হয়ে অনেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। কিন্তু ‘বিজি’ দেখানোয় কথা বলতে পারছেন না, পরামর্শও পাচ্ছেন না তারা।
Advertisement
এমন কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজ’র। তাদের অভিযোগ, ‘আমরা হটলাইনেও রিচ করতে পারছি না, একাধিকবার কল করেও বিজি পাওয়া যাচ্ছে। আইইডিসিআরেও সরাসরি সাক্ষাৎ করে কোনো ধরনের সহযোগিতা বা পরামর্শ মিলছে না। সেখানে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে।’
আজ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআর হটলাইনে কল এসেছে চার হাজার ২০৫টি। এর মধ্যে করোনা-সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে কল এসেছে চার হাজার ১৬৪টি। শুধু তা-ই নয়, অন্যান্য দিনের মতো আজও করোনার সংক্রমণ কিংবা উপসর্গ নিয়ে আইইডিসিআর কার্যালয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।’
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও জানান, দেশে আরও দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে পরীক্ষা করার পর ওই দুজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে।
Advertisement
‘করোনাভাইরাস এখনও সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি’ উল্লেখ করে তিনি এটি নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনে চলাফেরাসহ গণজমায়েত পরিহারের আহ্বান জানান। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ সেভাবে না পড়লেও বিশ্বব্যাপী এটি মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে মারা গেছেন সাত হাজার ১৭১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৮২ হাজার ৬০৯।
মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন শেষে আইইডিসিআর কার্যালয়ের নিচে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই সেখানে ভিড় করছেন। তাদের কেউ এসেছেন পরীক্ষার জন্য, কেউ-বা পরামর্শের জন্য।
তাদেরই একজন একটি সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্র হিমেল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রত্যেকের জন্য আলাদা ইনভেস্টিগেশন দরকার। সেটাতো মাত্র একটা জায়গা থেকে কখনও সম্ভব নয়। আমি গতকাল (সোমবার) সারাদিন ট্রাই করেছি। কিন্তু হটলাইনে ঢুকতেই পারিনি। ওয়েটিং তো ওয়েটিং। আমি বাধ্য হয়ে নিজে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। চেকআপ করেছি। আমি খুব আতঙ্কিত।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছি। আমার কখনও শ্বাসকষ্ট হয়নি। কনসাস তো শুধু আমি হলেই হবে না। কর্তৃপক্ষকেও হতে হবে। আমি যদি ইনফেক্টেড (আক্রান্ত) হই এবং আমাকে যদি শনাক্ত করা না হয়, তাহলে তো আমার মাধ্যমেই এ করোনাভাইরাসে আরও ১০-২০ জন কিংবা ১০০ জন ইনফেক্টেড হতে পারে। একজনকেও যদি আইইডিসিআর শনাক্ত করতে না পারে বা সহযোগিতা না করে তাহলে তো সমস্যা!’
Advertisement
‘আমরা তো যোগাযোগ করছি। কিন্তু একটা মাত্র সেন্টার পয়েন্ট থেকে টেস্ট ও নজরদারি তো সম্ভব নয়। আমরা তো রিচ করতে পারছি না। তারা লোড নিতে পারছে না। যোগাযোগই তো হচ্ছে না। আমি ইনফেক্টেড কি-না, তা তো জানাই সম্ভব হচ্ছে না’— বলেন হিমেল।
মগবাজার থেকে আসা ফারহানা আলম তোড়া নামে এক ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একজন ছাত্রী পড়াই। তার বাসায় বিদেশ থেকে আসা এক আত্মীয় এসেছিল। তিনি চলে যাওয়ার পর আমি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি। আতঙ্কে আছি। আমি যদি সত্যি সত্যি এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকি, তাহলে কে দেখবে?’
‘আইইডিসিআরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হটলাইনের একাধিক নম্বরে কল করেও পাচ্ছি না। আমি এখানে আসছি হটলাইনে না পেয়ে। কিন্তু এখানে কেউ কথা বলছেন না। টেস্ট করা তো দূরের কথা, কোনো চিকিৎসক আমাদের সঙ্গে যে কথা বলবেন বা পরামর্শ দেবেন, সেটাও কেউ করছেন না। এখন আমি আক্রান্ত হয়েও যদি না বুঝি, চলি-ফিরি তাহলে আমার পরিবার আক্রান্ত হবে। আমি মরব বা পরিবারের অন্য কেউ মরলে কে দেখবে?’
ফারহানার সঙ্গে এসেছেন তার বাবা আলমগীর হোসেন। আইইডিসিআর থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় তিনিও ক্ষুব্ধ। বলেন, ‘হটলাইন শাটডাউন, হাসপাতালে যেতে দেবেন না, এখানেও আসতে দেবেন না, আবার কলও ধরবেন না, রিং ঢুকলেও বলে সবকটি লাইন ব্যস্ত আছে। তাদের কল করে পাওয়া যাবে না। তাহলে তো ঘরে বসে থেকে মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘এখানে (আইইডিসিআর) বলা হচ্ছে, এখানে আসতে হবে না। তাহলে যাবটা কোথায়? নির্দেশনা দিচ্ছেন, আইইডিসিআরে আসা যাবে না। আবার সরাসরি হাসপাতালেও যাওয়া যাবে না। যোগাযোগ করতে হটলাইনে কল করতে বলছেন। কিন্তু কল যাচ্ছে না, কল রিসিভ হচ্ছে না, রিচ-ই করা যাচ্ছে না। তাহলে আমরা করবটা কী? কোথায় যাব?’
একপর্যায়ে কার্যালয়ের নিচে অনানুষ্ঠানিকভাবে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার সাক্ষাৎ পান তারা। তিনি উপস্থিত সবাইকে একাধিক ও বিকল্প নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে আপনারা মেসেজ করেন। আমরা মেসেজকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের হটলাইন মূলত চারটা। সেখানে বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১২টা। আরও পাঁচটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৭টা। ১৭ জন চিকিৎসক হটলাইনে থাকেন। তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না।’
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা তিন সাড়ে তিন লাখ মানুষকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের যেহেতু কমিউনিটি ইনফেকটেড হয়নি, সুতরাং ১৭ কোটি মানুষের কল করার তো কোনো প্রয়োজন নেই। আতঙ্কিত হবেন না। ঠান্ডা, জ্বর, কাশি হলেই যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন— এটা মনে করে শঙ্কিত হবেন না।’
জেইউ/এসআর/এমএআর/এমএস