ফিচার

মুজিববর্ষ ও সৌভাগ্যবান প্রজন্ম

আমি আমার শৈশব-কৈশোরের সাথে এখনকার নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রায়ই তুলনামূলক চিন্তা-ভাবনা করি। বিশেষ করে বর্তমানের শিশু-কিশোরদের শৈশব-কৈশোর নিয়ে বিভিন্ন কারণে তুলনা করে আনন্দিত হই। এ নিয়ে মাঝে মাঝে বিস্ময়ও জাগে। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু তুলনামূলক কথা বলছি।

Advertisement

এখনকার নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা অনেক সৌভাগ্যবান। এর দু’একটি কারণ শুরুতে বলছি। তারা এখন প্রযুক্তির সবশেষ ও সর্বাধুনিক পণ্যটি ব্যবহার করছে। আমাদের শৈশব-কৈশোরে আমরা কেরোসিনের আলোয় স্কুলের পড়া তৈরি করেছি। এখনকার শিশু-কিশোররা বৈদ্যুতিক আলোয় পড়ছে। এমনকি স্মার্টফোন, ট্যাব অনায়াসে ব্যবহার করছে। এসব ব্যবহার করে অনেকে পড়াশোনাও করছে।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে আনন্দ-বিনোদনের নতুন দুনিয়ায় ঘোরাফেরা করছে। আমাদের শৈশবের মত তাদের এখন আর লিখতে মাঠে যেতে হয় না! আমার ভাবতে অবাক লাগে, যখন আমি আমাদের ঘরে একটি বৈদ্যুতিক বাতি থাকলে কত ভালো হতো এমনটা ভাবছি, ঠিক সেই বয়সে এখনকার শিশু-কিশোররা বিদ্যুতের ঝলমলে আলোয় সময় কাটাচ্ছে।

এখনকার শিশু-কিশোররা যখন ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইনস্টাগ্রামে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করতে ব্যস্ত; ঠিক সেই সময়ে আমরা প্রাইমারি স্কুলের পাঠ শেষ করে ভিন্ন ভিন্ন হাইস্কুলে ভর্তি হলে কিংবা কেউ লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়লে শৈশব-কৈশোরের অনেক বন্ধু হারিয়ে ফেলেছি।

Advertisement

তারা এখন ব্যবহার করছে বিস্ময়কর ইন্টারনেট। যা আমাদের শৈশব-কৈশোরে শুধু অকল্পনীয়ই নয়, অনেকটা স্বপ্নের মত। এখনকার শিশু-কিশোররা একবার চিন্তা করে দেখো তো, এসব জিনিস ব্যবহার করতে পারা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার নয় কি? তারা সত্যিকারার্থেই সৌভাগ্যবান।

এসব ছাপিয়ে তারা আরও একটি কারণে সৌভাগ্যবান। সেটি হচ্ছে- জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান তাদের শৈশব-কৈশোরে দেখতে পারা। মানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিনের কথা বলছি।

মূল কথায় যাওয়ার আগে একটি কথা বলে রাখি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেলেন। অথচ আমি শৈশব-কৈশোরে তার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। আমাদের শৈশব-কৈাশোরে বঙ্গবন্ধুকে আড়াল করে রাখা হয়েছিল। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো বইয়ে কোথাও তার নাম কিংবা তাকে নিয়ে লেখা গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ আমরা পাইনি। এমনকি শৈশবে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি দেখারও সৌভাগ্য হয়নি।

এককথায় শেখ মুজিব আমার কাছে ছিলেন একজন সম্পূর্ণ অদেখা, অচেনা, অজানা মানুষ। এ কথা কি এখনকার শিশু-কিশোরদের বিশ্বাস হচ্ছে!

Advertisement

আমার যতদূর মনে পড়ে, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে লেখা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ পড়ি। এটাই ছিলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রথম পাঠ। সেই প্রবন্ধটির মাধ্যমে আমি শেখ মুজিব সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লেখাটি পড়ে তাকে নিয়ে জানার আগ্রহ তুমুলভাবে বেড়ে যায়। এরপর অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন স্থান থেকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লেখা বইপত্র সংগ্রহ করে পড়া শুরু করি। এখনকার মত আমাদের সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইপত্র এত সহজলভ্য ছিল না।

শুরুতে বলেছিলাম, এখনকার শিশু-কিশোররা সৌভাগ্যবান প্রজন্ম। এতক্ষণে তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে, তাদের সৌভাগ্যবান প্রজন্ম বলার কারণ কী? বিশাল জমকালো অনুষ্ঠান করে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বছরব্যাপী পালন করা হচ্ছে।

২০২০ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। শিশু-কিশোররা এরই মধ্যে জেনেছে, সরকারি-বেসরকারিভাবে বিশেষ আয়োজনের সাথে মুজিববর্ষ পালন করা হবে। মুজিববর্ষে জাতির পিতার জীবনের সব দিক তুলে ধরা হবে। বিষয়টি ভাবতে কেমন লাগছে? শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ১৬৫টি দেশে ‘মুজিববর্ষ’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো।

এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এখনকার শিশু-কিশোররা দেখতে পারছে, এটি আসলেই কি বড় রকমের সৌভাগ্যের ব্যাপার নয়!

এসইউ/জেআইএম