জাতীয়

করোনায় আক্রান্তদের ‘কন্টাক্ট ট্রেসিং’ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন আটজন। এদের চারজন বিদেশফেরত এবং চারজন তাদের সংস্পর্শে আসা স্বজন। করোনায় সংক্রমণের এ তথ্যই উদ্বেগে ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, চারজন বিদেশ থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে এসে তাদের স্বজনদের ঝুঁকিতে ফেলেছেন। এই আটজনসহ সন্দেহভাজন করোনায় আক্রান্ত প্রবাসীদের সংস্পর্শে কারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করাই (কন্টাক্ট ট্রেসিং) এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে।

Advertisement

রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে সোমবার (১৬ মার্চ) পর্যন্ত ২৪১ বিদেশফেরত ও তাদের সংস্পর্শে আসা লোকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মতো তিনজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। ওই দিন আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আক্রান্তদের মধ্যে দুজন ইতালিপ্রবাসী, একজন তাদের সংস্পর্শে থাকা স্বজন। পরে ১৩ মার্চ আইইডিসিআর জানায়, আরও দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরা ইতালি ও জার্মানিফেরত। সবশেষ সোমবার আরও তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিয়ে আইইডিসিআর জানায়, এই তিনজন বিদেশফেরত আক্রান্তের সংস্পর্শে থেকে সংক্রমিত হয়েছেন। তিনজনের একজন ২৫ বছর বয়সী নারী, একজন ৬ বছর বয়সী মেয়ে শিশু এবং একজন ২ বছর বয়সী ছেলে শিশু।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ইউরোপসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীদের দেশে ফেরার পর ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক হলেও অনেকেই তা মানছেন না। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শরীরে জ্বর বা হাঁচি-কাশি না থাকায় তারা নিজেদের সুস্থ মনে করে ঘরে-বাইরে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে কারও দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকলে অজ্ঞাতসারেই স্বজনরা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।

Advertisement

তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে তারা রোগী নন। যেহেতু তারা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাই দেশে ফেরার ১৪ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। প্রবাসফেরত ব্যক্তিকে নিজের পরিবারের সদস্য, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিরাপদ রাখতেই দুই সপ্তাহ একটি নির্দিষ্ট ঘরে স্বেচ্ছায় অন্তরীণ থাকতে হবে। নইলে তার মাধ্যমে স্বজনদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। এখন পর্যন্ত যে আটজন রোগী পাওয়া গেছে তাদের চারজনই প্রবাসফেরতদের সংস্পর্শে যাওয়ার শিকার হয়েছেন, এ বিষয়টি প্রবাসফেরতদের বিবেচনায় রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দেশে এখনো করোনাভাইরাস প্রবাসফেরত ব্যক্তি ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থাৎ পারিবারিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ভয়াবহ ছোঁয়াচে এ রোগটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসফেরত ব্যক্তিদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে যথাযথ পদ্ধতিতে ১৪ দিন বাড়িতে থাকতে বাধ্য করতে হবে। একইভাবে তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের একই পদ্ধতিতে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ও তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সাম্প্রতিক কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে হবে। তবেই করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এদিকে, রাজধানীসহ সারাদেশে বর্তমানে কতজন প্রবাসফেরত বা তাদের সংস্পর্শে আসা কতজন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন সে সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করছে না আইইডিসিআর। তবে রোববার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ২৪৭১ জন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের সিংহভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা। আর এ সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে।

অন্যদিকে করোনাভাইরাস ঠেকাতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

Advertisement

এছাড়া বর্তমানে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন বাড়ির একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি হয়।

আগের দিন রোববার (১৫ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে দুমাস ধরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে।

তিনি দেশের মানুষকে বিনা প্রয়োজনে গণপরিবহনে চড়তেও নিরুৎসাহিত করেন।

এমইউ/এইচএ/জেআইএম