বছর ধরলে তিন বছরে পার হয়ে গেছে; কিন্তু লিগের হিসেব কষলে দুই লিগ ধরে সেঞ্চুরি ছিল না মুশফিকুর রহীমের। এরমধ্যে আবার ‘কিন্তু’ আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রস্তুতির জন্য গতবার মানে ২০১৮-২০১৯ প্রিমিয়ার লিগ খেলেননি।
Advertisement
তার আগেরবার (২০১৮) সাকুল্যে ম্যাচ খেলেছেন ৮টি। তবে কোন সেঞ্চুরি ছিল না। সেবার লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৮ ম্যাচে ২৯৬ রান (সর্বোচ্চ ৬৭) করেছিলেন মুশফিকুর রহীম।
ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের এ নির্ভরতার প্রতীক ও ‘রান মেশিন’ তার আগের দুই বছরই ঢাকা লিগে সেঞ্চুরি করেছিলেন। হিসেব কষলে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটে মুশফিকের শেষ শতরান ২০১৭ সালে।
২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ১৩৪ বলে (১৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়) ১৩৪ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে দলকে ৬৮ রানে জিতিয়েছিলেন মুশফিক।
Advertisement
জাতীয় দলের ব্যস্ততার কারণে সেবার লিগে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে মাত্র চারম্যাচে মাঠে নামতে পেরেছিলেন মুশফিক। আর তাতেই করেছিলেন ২৭৯ রান। একটি শতক (১৩৪) ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে ৯৩.০০ গড় আর স্ট্রাইকরেট ৮২.৫৪।
এরও আগে ঠিক আগের বছর, ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে শেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেটা ছিল মোহামেডানের হয়ে। চার নম্বরে নেমে ১০৮ বলে ৯৬.২৯ স্ট্রাইকরেটে, পাঁচ বিশাল ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে ১০৪ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিয়েও মোহামেডানকে জেতাতে পারেননি। ২৪৭/৯ রান করেও ২ উইকেটে হেরে যায় সাদা-কালোরা। তবে মুশফিক হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা।
এবার আবাহনীর হয়ে প্রথম ম্যাচেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া। দলের চরম বিপদে ১২৪ বলে ১২৭ রানের অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে দল জেতানো এবং লিগের শুরুতেই ম্যান অফ দ্যাচ ম্যাচ নির্বাচিত হলেন। এক সাংবাদিক তবু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন তিন বছর পর সেঞ্চুরি। কেমন লাগেছে? অনুভুতি কেমন?
খেলা শেষে শেরে বাংলার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মুশফিক অগে মনে করিয়ে দিলেন গতবার তো খেলিনি। আর খানিক পাল্টা প্রশ্নের মত করে বললেন, ‘তিন বছর পর না কি? গত বছর তো খেলিনি। অনুভুতি, অবশ্যই ভালো লাগছে।’
Advertisement
মুশফিক মনে করেন, ঢাকার প্রিমিয়ার লিগ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, আকর্ষনীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ আসর। তাইতো মুখে এমন কথা, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি যে, ‘বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রিমিয়ার লিগ সবচেয়ে বড় আসর।’
এ রকম আসরে তিনি প্রথমবার আবাহনীর হয়ে মাঠে নেমেছেন। স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করলেন একটুও। তার মত ঝানু, পরিণত ও নির্ভরযোগ্য উইলোবাজেরও শুরুতে একটু নার্ভাস লেগেছে।
তাই মুখে এমন কথা, ‘এখানে শুরুটা ভালো হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। ভালো লাগছে। সবমিলিয়ে প্রথম ম্যাচ ছিল দলের। সবাই একটু নার্ভাস ছিল, এটাই স্বাভাবিক। কারণ চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে আপনার চাপ সবসময় থাকবেই। আপনি যতোই বড় কিংবা ছোট দল বলেন, জেতার জন্যই আবাহনী সবসময় খেলে। দিন শেষে দল জিতেছে, আলহামদুলিল্লাহ।’
চাপ সামলে সেঞ্চুরি করা প্রসঙ্গে কিছু বলতে বলা হলে মুখ সরাসরি বলে ওঠেন, ‘দেখুন! আমি সবসময় এই চাপ এবং চ্যালেঞ্জগুলো উপভোগ করি। এখান থেকে যখন আপনি ওভারকাম করতে পারবেন তখন এই জিনিসগুলো ব্যক্তিগত দিক থেকে যদি বলি তখন আপনাকে এক স্টেপ এগিয়ে দেবে। আমি সবসময় এই জিনিসগুলো উপভোগ করি, সেটা শুধু ঘরোয়া লিগ কিংবা আবাহনীর জন্য না। তবে আমি চেষ্টা করি যে লেভেলেই খেলি, সেটা ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক যেটাই হোক, সবসময় দলের জয়ে আমার অবদান যেন বেশি থাকে সেটা মাথায় থাকে। আর যেটা বললেন যে সত্যি কথা বলতে আসলেই একটু নার্ভাস ছিলাম। কারণ আবাহনীর হয়ে প্রথম ম্যাচ, ওরা সবসময় কিন্তু চ্যাম্পিয়ন দল গড়ে। অধিনায়ক হিসেবে আমি এর আগেও যেটা বলেছি যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চায় এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে মোসাদ্দেক এবং সাইফউদ্দিন অসম্ভব ভালো ব্যাটিং করেছে এই উইকেটে। একটু কঠিন ছিল প্রথমটা। তবে সবমিলিয়ে ভালো হয়েছে।’
প্রথম রান করতে অনেক বল (২৪) খেলা সম্পর্কে মুশফিকের ব্যাখ্যা, ‘আমি নিজেও আসলে ভুলে গিয়েছি, হয়তো টেস্টেও এমন হয়নি কখনো, খুব বিরল যে প্রথম রান করতে এত বল খেলেছি। তবে আমার কখনোই চাপ মনে হয়নি, কারণ আমার নিজের প্রতি একটা বিশ্বাস ছিল যে আমি যদি উইকেটে থাকতে পারি এবং সেট হয়ে যেতে পারি তাহলে অবশ্যই আমি রান করতে পারবো। আমার যে সঙ্গীরা ছিল ওদের শুধু একটা কথাই বলেছিলাম যে একটা জুটি গড়তে হবে এবং সেটা মেরিট অব দ্য বল খেলে।’
এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ