গণমাধ্যম

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে স্মারকলিপি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ৮ বছরেও মামলার তদন্ত শেষ করতে না পারায় হতাশ সাংবাদিক সমাজ। তাই তদন্ত শেষ করে দ্রুত বিচার দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।

Advertisement

রোববার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ডিআরইউয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরি স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট দেয়া হয়। এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু ডিআরইউয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরিসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের সাথে জানাচ্ছি যে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির দুই স্থায়ী সদস্য মাছরাঙা টেলিভিশনের সাবেক বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও তাদের হত্যার কোনো কূলকিনারা হয়নি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজা বাজারের ভাড়া বাসায় তাদের শিশুপুত্রের সামনে নির্মমভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি।

দীর্ঘ ৮ বছরেও চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ ও র্যাবসহ সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশ, সিআইডি, ডিবি ও সবশেষে র্যাবের কাছে মামলার হাতবদল হয়েছে মাত্র। হাত ঘুরে তদন্তের ভার এখন র্যাবের কাছে। তারাও এই হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত সংস্থা আদালত থেকে ৭১ বার সময় নেয়ায় জনমনে হতাশা ও সন্দেহ আরও ঘণীভূত হয়েছে।

Advertisement

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ৭১ বার সময় নেয়ার পরে হাইকোর্টে র্যাবের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, তাতেও নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। তদুপরি, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে এই প্রতিবেদন কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি না।

দীর্ঘদিন বিচার না পেয়ে সাগর-রুনির পরিবারের পাশাপাশি গোটা সাংবাদিক সমাজ হতবিহ্বল। ক্ষোভে বাকরুদ্ধ মেহেরুন রুনির মা নুরুন্নাহার মির্জা, সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মুনির। কিন্তু এখনো বিচারের আশা ছাড়েননি দুই মা, সাগর-রুনির শিশুপুত্র মাহীর সরওয়ার মেঘ ও সাংবাদিক সমাজ।

এ অবস্থায় সাগর-রুনি হত্যার কার্যকর বিচার দাবিতে ডিআরইউয়ের অবিচল অবস্থান এখনও বিচ্যুত হয়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছেড়ে যাবে না রিপোর্টারদের প্রাণের এই সংগঠন।

যেকোনো হত্যার বিচার পাওয়া নাগরিকের অধিকার। আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের সেই অধিকার নিশ্চিত করা। আমাদের সুযোগ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বড় বড় হত্যা রহস্য উন্মোচন ও অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। সাগর-রুনি হত্যার কোনো কূলকিনারা তারা করতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। কোনো অদৃশ্য শক্তি বা বাধার কারণে নৃশংস এই হত্যার তদন্তের নামে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ করা হচ্ছে কি-না সেটাই এখন বড় রহস্য।

Advertisement

বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আইন সকলের জন্য সমান। আর অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। আমরাও মনে করি সাগর-রুনির চাঞ্চল্যকর এই হত্যার বিচার হলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

সাগর-রুনি কেন খুন হলেন? কারা এই খুনের সাথে জড়িত তা জানতে চায় দেশবাসী। আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে এবং প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবি জানানো হচ্ছে।

অবিলম্বে খুনিদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে হবে, ৮ বছরেও চার্জশিট দিতে না পারার কারণ তদন্ত করতে হবে, পাশাপশি দ্রুততম সময়ে এই মামলার চার্জশিট দিয়ে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

অন্যথায় ডিআরইউ বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে এবং চলমান আন্দোলনকে অব্যাহত রাখবে।

এমইউএইচ/এনএফ/জেআইএম