মতামত

চাই শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী

আজ বিশ্ব শিশু দিবস। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি শিশু অধিকার নিয়ে যে সমস্ত কথা বলেছেন তা অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুর অধিকার বাস্তবায়নে পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ সকল সচেতন নাগরিককে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণকাজে নিয়োজিত শিশু, বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছেও বলে তিনি বাণীতে উল্লেখ করেন। বলা হয়ে থাকে আজকের শিশুই ভবিষ্যত। সে কারণেই শিশুরা যাতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য শিশুদের সৃজনশীল মেধা, মানসিক বিকাশ এবং মননশীলতার উন্নয়নে বিভিন্নমুখি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অন্যতম অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। অবশ্য জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণার বহু পূর্বে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ শিশু আইন প্রণয়ন করেন।বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে শিশু অধিকারের বিষয়টি খুব একটা সুসংহত নয়। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে শিশু শ্রমিকরা। শিশুশ্রম আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। কিন্তু বিশ্বের কোনো দেশই শিশুশ্রমের বাইরে নয়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও প্রকট। বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই শিশুশ্রমে নিয়োজিত। মূলত দরিদ্র পরিবারে অর্থনৈতিক সহায়তার জন্যই এসব শিশুকে শ্রমে নিযুক্ত হতে হয়। আর এসব শিশুরা শুধু দিনান্ত পরিশ্রমই করে না বরং এমন সব কাজ করতে হয় যা তাদের জন্য অত্যন্ত  ঝুঁকিপূর্ণ। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশুদের বাধ্যতামূলক শ্রম, সশস্ত্র  সংগ্রামে ব্যবহারের জন্য বাধ্যতামূলক নিয়োগ, পর্নোগ্রাফি সদৃশ কোনো কাজে ব্যবহার, মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও পাচারে ব্যবহার এবং যে সব ব্যক্তিগত পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে শিশুর স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কিংবা নৈতিকতার ক্ষতিসাধন করে সেগুলোকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বলা হয়েছে। কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে এক বিরাট সংখ্যক শিশু এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ওয়েলডিং কারখানা, লবণ ও সাবানের কারখানা, বিড়ি ফ্যাক্টরি, এমনকি ভারী জিনিসপত্র বহনেও তাদের নিয়োগ করা হয় যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। এমনকি তাদের জীবনকে পর্যন্ত হুমকিগ্রস্ত করে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের ফলে সারাবিশ্বে প্রতিবছর ২২ থেকে ২৫ হাজারশিশু প্রাণ হারায়। মধ্যপ্রাচ্যে উটের জকি হিসেবেও শিশুদের ব্যবহার করা হয় যারমধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশের শিশু। অপেক্ষাকৃত সস্তা এবং সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশের শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।  এমনকি অপরাধমূলক ও অনৈতিক কাজের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা হচ্ছে জোর করে। বলা হয়ে থাকে আজকের শিশুই আগামী দিনের সম্পদ। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত শ্রমজীবী শিশুদের ভবিষ্যত আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। অধিকার বঞ্চিত এসব শিশুকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে না পারলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন কি আদৌ সম্ভব? অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গার্মেন্টস সেক্টরকে শিশুশ্রম মুক্ত করা গেছে। তাহলে অন্যান্য সেক্টরগুলোকেও শিশুশ্রম মুক্ত করতে বাধা কোথায়? একদিকে স্কুলগামী শিশুদের এক বিরাট অংশ শিশুশ্রমে বাধ্য হচ্ছে অন্যদিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা। এই বৈপরীত্যের মানে কী?বিশ্বব্যাপী আজ যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ত্রাসের দাবানল এ থেকে শিশুদের রক্ষা করা যাচ্ছে না। সাগরে ডুবে মৃত শরণার্থী শিশু আয়লান কিংবা বাংলাদেশে গণপিটুনির শিকার রাজনের মর্মান্তিক মৃত্যু আজ গোটা বিশ্বেই শিশুদের এক নাজুক অবস্থায়ই তুলে ধরছে।  তাই শিশু অধিকার রক্ষায় গোটা বিশ্বকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর অধিকারের বিষয়টি তো অনেক পরের, আগে তাদের জীবন যাতে সংশয় না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার। এইচআর/এমএস

Advertisement