বিশেষ প্রতিবেদন

বিলুপ্তির পথে চুনশিল্প, পেশা বদল করছে কারিগররা

`যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম` বা `পান খেয়ে ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধুর ভাগ্য হইল না` পান নিয়ে এ রকম কত না জনপ্রিয় গান আছে বাংলা সংস্কৃতিতে। আর এ পান তৈরির অন্যতম উপাদান হলো চুন।কিন্তু এই চুন কিভাবে তৈরি হয় তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। জানা গেছে, চুন তৈরির প্রধান উপাদান হলো শামুক ও ঝিনুক। চুন তৈরির জন্য প্রথমে শামুক ও ঝিনুক সংগ্রহ করে তা ভাটায় (শামুক ও ঝিনুক পোড়ানোর বিশেষ চুলা) কাঠের টুকরা ও শামুক এবং ঝিনুক পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। এভাবে ২ থেকে৩ ঘণ্টা পোড়ানোর পর শামুক ও ঝিনুক পুড়ে সাদা রং ধারণ করে। পোড়া শামুক ও ঝিনুকগুলো ভাটা (শামুক ও ঝিনুক পোড়ানোর বিশেষ চুলা) থেকে নামিয়ে চালুনির মাধ্যমে নষ্ট শামুক ও ঝিনুকগুলো আলাদা করতে হয়। এরপর পোড়ানো ভাল শামুক ও ঝিনুকগুলো চুর্ণ বিচুর্ণ করে মাটির চাড়িতে পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হয়। বাঁশের হাতা দিয়ে ২০/২৫ মিনিট ঘুটলে চুনের সাদা রং বেড়িয়ে আসে, তৈরি হয় পান খাওয়ার গুরুত্বপূর্ন উপাদান চুন। এভাবে ৫০ কেজি পুড়ানো চুর্ণ-বিচুর্ণ শামুক ও ঝিনুকের সঙ্গে পানি মিশেয়ে তা থেকে প্রায় ১৫০/১৮০ কেজি চুন তৈরি করা হয়। ধবধবে সাদা করতে চুনের সঙ্গে বিচি কলার রস মিশাতে হয়। এরপর তা জালের মাধ্যমে ছেকে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রয়ের উপযোগী করা হয়। ঝিনাইদহে আঞ্চলিক ভাষায় এই চুন শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের চুনুটে বা চুনে বলা হয়।ঝিনাইদহের সদর উপজেলাসহ ৬ উপজেলাতেই এই চুন শিল্পীরা বসবাস করে। তাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্যগত চুন তৈরির ব্যবসার সঙ্গে এখন অনেকের জড়িত আছে। তবে জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে তাদের উপাজর্ন না বাড়ায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ চুন তৈরির উপদান না পাওয়ার কারণে অনেকেই পেশা বদল করছে। চুল শিল্পের কারিগর শ্রী অজিত মেম্বর জাগো নিউজকে জানান, চুন তৈরির কাজ আমাদের জাত পেশা। কিন্তু বর্তমানে খাল-বিল, নদী-নালায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শামুক ও ঝিনুক না পাওয়ায় অতিরিক্ত দামে তা সংগ্রহণ করতে হচ্ছে। অতীতে বস্তা প্রতি শামুক ও ঝিনুক ৬০ টাকা দরে কিনলেও বর্তমানে বস্তা প্রতি শামুক ও ঝিনুক ৩০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। চুনের বর্তমান বাজার দর প্রতি মণ (৪০কেজি) ৬০০ টাকা। কিন্তু শামুক ও ঝিনুক পোড়ানোসহ বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে যে লাভ হয় তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই ক্ষতি সামলাতে অনেকে এই জাত পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তিনি সংশয় প্রকাশ করে আরো বলেন, আমি আর কতদিন এ পেশা ধরে রাখতে পারবো তা ভগবানই জানেন। তাই ছেলে-মেয়েদের অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি।এসএস/এমএস

Advertisement