প্রবাস

ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের অতিউৎসাহী সিদ্ধান্ত! হতবাক কমিউনিটি

সারা ইউরোপে করোনাভাইরাস আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসে ফ্রান্সে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৪৬৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৯১ জন। এখনও পর্যন্ত ইউরোপে করোনা আক্রান্ত শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্স।

Advertisement

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেও রক্ষা পাচ্ছে না ইউরোপ। দিন যত যাচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ততই বাড়ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই নানা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। জনগণকে সুস্থ রাখতে জরুরি অবস্থা জারিসহ সবধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে ফ্রান্সের বাংলাদেশ দূতাবাস বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণপত্রও দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফ্রান্স প্রবাসী বলেন, এমন নাজুক পরিস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। যেখানে সারা বিশ্বের সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে সেখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পালন করে দূতাবাস জনগণকে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে। আগে মানুষের জীবন তারপরই তো কমিউনিটির অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, এই আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৩ মার্চ থেকে। ফ্রান্সে গত ১০ মার্চ থেকে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারপরও দূতাবাস কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল?

Advertisement

ফ্রান্সের প্রবীণ কমিউনিটি নেতারা মনে করেন, আমরা যেই দেশে থাকি সেই দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। আমরা খুবই খারাপ একটা সময় পার করছি। দূতাবাসের উচিত দিন তারিখ পরিবর্তন করা। মহামারি কমলে নতুন করে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। সেখানে আমাদের বুঝতে হবে কতটুকু ভয়াবহতার মধ্যে দিন পার করছি। লোক সমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হলেও দূতাবাস লোক সমাগম জড়ো করে সরকারের আনুগত্য বোঝাতে চাচ্ছে।

এমতাবস্থায় ফ্রান্স সরকারও নানা শিডিউল পরিবর্তন করেছে। দেশটিতে প্রতিনিয়ত ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। জনপ্রিয় ফুটবল লিগগুলোও বাতিল করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদেরও নানা শিডিউল বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্বের অনেক রাজনীতিবিদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে চলতি সপ্তাহেই অনেকের শরীরে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে অনেকবার ফোন দেয়া হলেও কেউ কল রিসিভ করেনি। দূতাবাসের এমন উদ্ভট সিদ্ধান্তে হতাশ সুধীমহল।

Advertisement

উল্লেখ, বিশ্বের ১৫২টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে মারা গেছে ৫ হাজার ৮৩৬ জন।

করোনায় আক্রান্ত ৭৫ হাজার ৯২২ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮২৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৯৯ জনের। সেখানে নতুন করে আর কারো আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে নতুন করে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চীনের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ১৫৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১ হাজার ৪৪১ জন।

এরপরেই রয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৭২৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৬১১ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ১৬২ এবং মৃত্যু ৭৫। স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৯১ এবং মৃত্যু ১৯৬।

জার্মানিতে করোনায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৫৯৯ এবং মৃত্যু ৯। ফ্রান্সে আক্রান্ত ৪ হাজার ৪৬৯ এবং মৃত্যু ৯১। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ২ হাজার ৮৩৬ এবং মৃত্যু ৫৭। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১ হাজার ৩৭৫ এবং মৃত্যু ১৩, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ১ হাজার ১৪০ এবং মৃত্যু ২১।

নরওয়েতে আক্রান্ত ১ হাজার ১০৯ এবং মৃত্যু ৩। সুইডেনে আক্রান্ত ৯৬১ এবং মৃত্যু ২। নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ৯৫৯ এবং মৃত্যু ১২, ডেনমার্কে আক্রান্ত ৮৩৬ এবং মৃত্যু ১, জাপানে আক্রান্ত ৮০৪ এবং মৃত্যু ২২, জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরীতে আক্রান্ত ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। অপরদিকে বাংলাদেশে আক্রান্ত ৫ এবং ভারতে ১শ।

এমআরএম/এমকেএইচ