আইন-আদালত

ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাংবাদিককে দণ্ড : বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) কারাদণ্ড প্রদানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে হাইকোর্টে।

Advertisement

রোববার (১৫ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন। ইশরাত হাসান বলেন, আজ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রশিদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে। তাদের সঙ্গে সাংবাদিকের পক্ষে লড়বেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

এছাড়া রিটে ফৌজদারি কার্যবিধি, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৫ এবং ৩৬ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক এবং পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয় বলে দাবি করেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা। তবে আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার বলেন, ‘মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পেটানো, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।’

Advertisement

‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নাকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় নিয়েছিল, তা নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আরিফকে কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ার বাড়ি থেকে আটকের পর সাজা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

রাতের বেলায় সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামে রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার পৌঁছেছেন। তাকে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ অভিযানের সময় মাদকসহ আরিফুল ইসলাম রিগানকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে তিনি দোষ স্বীকার করায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আরিফের স্ত্রী মোস্তারিমার অভিযোগ, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তার নিজ নামে একটি পুকুর করেছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। এ ছাড়া সম্প্রতি একটি নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। এ সবই তার জন্য কাল হয়েছে।

Advertisement

তবে মোস্তারিমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘আমার নামে কোনা পুকুরের নামকরণ হয়নি। এক বছর আগে এমন প্রতিবেদন করেছিলেন আরিফুল। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। ওটা বিষয় না।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অ্যাজ ইউজুয়াল টাস্কফোর্স অভিযানে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমার একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের কয়েকজন ফোর্স, ব্যাটালিয়ন আনসারের পাঁচজন আর মাদকদ্রব্যের তিনজন ছিলেন। তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান হয়।’

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেছেন, তিনি এলাকায় ছিলেন না। পরের দিন শনিবার দুপুরে কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহিদ তাকে জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অভিযানের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়।

আবু জাফরের এই বক্তব্য জেলা প্রশাসককে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্য কার্যালয়ের পক্ষ থেকেই চাওয়া হয়েছিল। তারপর এরা (ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা) বলেছে যে যাওয়া যাবে। অবশ্য আমি তো কাল ছিলামও না, আমি রৌমারিতে ছিলাম।’

আরিফুলের স্ত্রী রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাতে ঘুমোনোর আয়োজন চলছে, সেই সময়ে দরজায় আঘাত। কে ডাকছে, এ প্রশ্নে কোনো সাড়া নেই। সন্দেহ তাই বাড়ে। আরিফুল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে ফোন দেয়ার যখন চেষ্টা করেছেন, তখনই হুড়মুড় করে দরজা ভেঙে সাত-আটজনের একটি দল ঢুকে পড়ে। তাদের মধ্যে তিনজন জাপটে ধরে আরিফুলকে পেটাতে থাকে। আমাকেও মারার উপক্রম করে, গালিগালাজ চলতে থাকে। একজন আরিফুলকে বলেন, তুই খুব জ্বালাচ্ছিস।’

এফএইচ/এসএইচএস/এমএস