ফিচার

প্রতিবন্ধকতা নিয়েই চলছে সরকারি এবি কলেজ

নানা জটিলতার মধ্যদিয়েই চলছে সন্দ্বীপ সরকারি হাজী আবদুল বাতেন (এবি) কলেজের কার্যক্রম। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামো, পরিবহন ও কর্মচারী সঙ্কট। বর্তমানে কলেজটিতে বিভিন্ন পদে ৫৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। নেই কোনো বহুতল একাডেমিক ভবন।

Advertisement

উত্তর চট্টগ্রামের ১ম সরকারি কলেজ হওয়া সত্ত্বেও বরাবরই ফল খারাপ করে আসছে কলেজটি। যেখানে চট্টগ্রামের অন্য সরকারি কলেজগুলোর ঈর্ষণীয় ফলাফল। গত ৬ বছরে ফল বিপর্যয় ঘটেছে কলেজটির। কলেজের পাসের হার ২০১৯ সালে ৩৮.৮৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৪৫.৫৯ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৩৭.১০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৪৭.০৫ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৪৭.৯৪ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৪৯.১৬ শতাংশ। জানা যায়, সরকারি হাজী এবি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি (পাস), বাংলা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। বর্তমানে শিক্ষার্থী প্রায় ২ হাজার। রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, ইসলামের ইতিহাস, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের কোনো শিক্ষক নেই। ইংরেজি, গণিত, সমাজকর্মসহ কয়েকটি বিভাগে ৫ জনের জায়গায় বড়জোর ২ জন করে শিক্ষক আছেন। বাংলায় অনার্স খোলার পর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রয়েছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর ৩৩টি পদের মধ্যে মাত্র ৫ জন কর্মরত।

একসময় মেঘনার রোষানলে কলেজটিও বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে মূল ভূখণ্ডের মাঝামাঝি মুছাপুর ইউনিয়নে স্থানান্তর করা হয়। ফলে ৬.২৪ একর জায়গায় ২০০৭ সালে কলেজের জন্য কিছু টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়। অনেক জায়গা নিয়ে ক্যাম্পাস হলেও তা বেশ এলোমেলো। যেখানে-সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।

নতুন ক্যাম্পাসের অবকাঠামো পাঠদান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনায় অনেকটা অনুপযোগী। বিশেষ করে গ্রীষ্মে অসহনীয় গরম আর বর্ষায় বৃষ্টির শব্দে শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অবস্থানও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এলাকায়। এ অজুহাতে গড়ে ওঠেনি কোনো পরিকল্পিত অবকাঠামো। নেই বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চ। পরীক্ষার সময় অন্য বিদ্যালয় থেকে ১০০ জোড়া বেঞ্চ ধার করতে হয়। এছাড়া সন্দ্বীপের যাতায়াত খরচ খুবই বেশি। দৈনিক ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে আসতেও চায় না। এমনকি কলেজে কোনো আবাসিক ব্যবস্থাও নেই। ছাত্রাবাস থাকলে শিক্ষার্থীরা সেখানে থেকে পড়াশোনা করতে পারতো। এছাড়া বাংলা বিষয়ে অনার্স চালুর পর প্রথম কয়েক বছর কুমিল্লার একজন শিক্ষক ক্লাস নিতেন। তিনি ২০১৬ সালে বদলি হওয়ার পর আর ক্লাস হচ্ছে না। বাংলা বিভাগের ছাত্র মো. জামিল বলেন, ‘তৃতীয় বর্ষে একদিনও ক্লাস না করেই ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অনার্সের পরীক্ষার কেন্দ্র চট্টগ্রাম হওয়ায় পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি। ক্লাস না হওয়া এবং কেন্দ্র চট্টগ্রামে হওয়া নিয়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে অনার্সের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।’

Advertisement

সন্দ্বীপ এডুকেশন সোসাইটির আহ্বায়ক রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, ‘কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বীপের শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো অবদান রেখে আসছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। আবাসন সমস্যার কারণে শিক্ষকরা এখানে থাকতে চান না। শিক্ষকরা আসার আগে যাওয়ার চিন্তা করেন। আবাসন সমস্যার সমাধান ও শিক্ষক স্বল্পতা দূর করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’ কলেজটির অধ্যক্ষ ড. ফজলুল করিম বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা জরুরি। বিশেষ করে অবকাঠামোর দিক থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে কলেজটি। কলেজে ভালো অবকাঠামো, ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া গ্রামের চেয়ে শহরের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা বেশি পান। তাই তারা গ্রামে থাকতে চান না। এ বৈষম্যও দূর করা প্রয়োজন।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। খুব শিগগিরই কলেজের সমস্যার সমাধান হবে।’

অপু ইব্রাহিম/এসইউ/এমএস