আন্তর্জাতিক

করোনায় ‘শাটডাউন’র শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যক্রমে পুরোপুরি অচলাবস্থা (ফুল শাটডাউন) নেমে আসতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনকি করোনার কারণে দেশটিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা দুই মাস পর্যন্ত চলতে পারে।

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসির বক্তব্যে উঠেছে এমন শঙ্কার কথা। শুক্রবার (১৩ মার্চ) গুড মর্নিং আমেরিকা ও সিবিএস দিস মর্নিং নামে দুটি সাক্ষাৎকারে তিনি করোনাভাইরাস ও যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

গত জানুয়ারিতে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৫২ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ হাজার ৮০ জন। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৭০ হাজার ৭১৪ জন।

চীন এ ভাইরাস সংক্রমণের লাগাম কিছুটা টেনে ধরলেও এটি এখন ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত মাত্র একজন থাকলেও তা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। গত ১১ মার্চেই দেশটিতে ১ হাজার ৩১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৪১ জন।

Advertisement

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জাইর বলসোনারোর করমর্দন। এরপরই করোনায় আক্রান্তের খবর আসে ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের। ৭ মার্চের ছবি

ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, সামলাতে না পারলে পরিস্থিতি সত্যিই আরও নাজুক হবে।

চীন ও ইতালির মতো যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত নই এ বিষয়ে। তবে এমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একটা বিষয় বলতে পারি যে, সব কিছুই (ফুল শাটডাউনও) আলোচনার টেবিলে রয়েছে। যেভাবে দিনে দিনে সপ্তাহে সপ্তাহে পরিস্থিতি গড়াচ্ছে, আমাদের তা সামলানোই এখন প্রধান কাজ।

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিনিদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ভাইরাস শিগগির বিদায় হবে। যদিও বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) তিনি ইউরোপিয়ানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্বার বন্ধ করে দেন এবং বলেন, বাইরে থাকা যেসব আমেরিকানের করোনা টেস্ট পজিটিভ এসেছে, তারাও এখন দেশে ফিরতে পারবেন না।

Advertisement

ফাউসি বলেন, এই সংকট আরও ক’সপ্তাহ চলতে পারে, এমনকি সেটা দুই মাসও হতে পারে। এ বিষয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না, তবে আপনি অতীতে ঘাঁটলে দেখবেন যে, কয়েক সপ্তাহ থেকে আট সপ্তাহ (৫৬ দিন) পর্যন্ত লেগে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারে যে শাটডাউন চলে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে লাখ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে বেতন ছাড়াই বাধ্যতামূলত ছুটিতে যেতে হয়। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা), জাতীয় পার্ক, পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাসহ বেশ কিছু সেবা সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের সামলাতে হয় দেশটিকে।

এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা শুধু বিশ্বের মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বিপর্যয় ঘটায়নি, এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি, পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশেষ করে আকাশপথে ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। শেয়ারবাজারগুলোর অবস্থা নাজেহাল। বিশ্ব বাণিজ্যে চলছে বিপর্যয়।

এইচএ/জেআইএম