জাতীয়

স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় যেভাবে এসেছিল রইজ উদ্দিনের নাম

সমালোচনার মুখে স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে অবশেষে বাদ দেয়া হলো এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের নাম। ২০১৯ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও সাহিত্যে রইজ উদ্দিনের অবদানের বিষয়ে সেভাবে কেউই অবগত নন! তাই তার মনোনয়ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

Advertisement

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ফেসবুকে লিখেন- ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজ উদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। কালীপদ দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’

গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রকাশিত সংশোধিত তালিকায় রইজ উদ্দিন আহম্মদ বাদ পড়েন। এখন ৮ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হবে।

খুলনা বিভাগীয় উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনারের পদে থাকার সময় গত ১৫ জানুয়ারি অবসরে যান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা রইজ উদ্দিন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও।

Advertisement

তার নাম কীভাবে এলো তালিকায় তা অনুসন্ধান করেছে জাগো নিউজ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নাম প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম চূড়ান্ত করে থাকে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এই কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিয়ে থাকে।

এই কমিটিতে আরও ১২ জন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া সহায়তাকারী হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ ১০ জন সচিব।

স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় রইজ উদ্দিনের নাম কীভাবে এলো জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় তার নাম প্রস্তাব করেছিল। গত পরশুদিন ভূমি মন্ত্রণালয় চিঠি লিখে দুঃখ প্রকাশ করে নাম প্রত্যাহার করেছে। তাই আমরাও তাকে মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক, এ বিষয়টির জন্য আমরা দুঃখিত।’

Advertisement

কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নাম প্রস্তাব করার পর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির অবদান যাচাই করা হয় কিনা- জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক কোনো জবাব দেননি।

কোন প্রেক্ষাপটে রইজ উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন, জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী মো. সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি অসাবধানতাবশত হয়ে গেছে। আমরা তার নাম প্রত্যাহারও করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরাও আমাদের দফতর-সংস্থার কাছে নাম চেয়েছিলাম, ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে এই নামটি এসেছে। আমরা এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছি। কিন্তু তার মনোনয়নের পর যখন সমালোচনা হচ্ছে, আমরা ইনভেস্টিগেট করে দেখলাম জিনিসটা ঠিক হচ্ছে না। তখন আমরা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিলাম। এটা তো কমিটির যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল।’

তখন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) ছিলেন উম্মুল হাছনা (বর্তমানে ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান)। রইজ উদ্দিনের নাম প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনি (রইজ উদ্দিন) আমাদের ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন, তিনি পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছেন। আমরা তার আবেদনটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি, এটাই নিয়ম। আমাদেরও তো যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ নেই!’

এ বিষয়ে জানতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে অসংখ্যবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আরএমএম/এসএইচএস/জেআইএম