করোনাদুর্গত চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড প্রবাসী কিংবা ভ্রমণ ফেরত নাগরিকদের নিজ বাড়িতে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ এ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়।
Advertisement
এছাড়া এসব দেশ থেকে ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তাহলে অতি দ্রুত সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) দুপুরে বিষয়টি জাগো নিউজকে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা হিসেবে যে কোনো তথ্য দিতে চট্টগ্রাম জেলার জন্য সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। করোনা সম্পর্কিত কোনো তথ্য জানতে চাইলে বা কোনো সাহায্য সহযোগিতা চাইলে ০৩১-৬৩৪৮৪৩ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগের অধিকাংশ এলাকা প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঝুঁকি বিবেচনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি করোনাদুর্গত চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ইরান, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড থেকে কোনো প্রবাসী কিংবা ভ্রমণকারী দেশে ফিরে আসলে, তাকে অবশ্যই নিজ বাড়িতে ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ এ থাকতে হবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ করছি। যদি জেলা বা উপজেলায় এমন কোনো ব্যক্তি এসে থাকেন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্বাবধায়নে ওই ব্যক্তির ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ তদারকি করা হবে।’
এ সময় তিনি ইতালি ফেরত চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও কক্সবাজারে একজন করে মোট চারজন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সামলাতে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় এক হাজার ৪০০ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বিআইটিআইডি হাসপাতালে চালু করা হয়েছে ১০ শয্যার ইউনিট। চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ধরা পড়লেই তার স্থান হবে ফৌজদারহাটে। আক্রান্ত রোগীকে বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হাসপাতালের কিছু বেড খালি করা হয়েছে করোনাভাইরাসের রোগী রাখার জন্য। ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাহাড়ের ওপরে আলাদা ব্লকে ১০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এখন একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে, সেখানে শয্যা আরও বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে চট্টগ্রামের দুই স্কুল।
তিনি আরও বলেন, ‘চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে জরুরি প্রয়োজনে চসিক জেনারেল হাসপাতাল, মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল ও ওয়ার্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং (পরীক্ষা) করা হচ্ছে।’
Advertisement
সীতাকুণ্ডের সেই ব্যক্তিও থাকবেন ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ :
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ১০ নম্বর উত্তর সলিমপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়ার এক বাসিন্দা কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই মঙ্গলবার ইতালি থেকে দেশে ফেরেন। বুধবার সকালে তার ইতালি থেকে ফেরার খবর এলাকাবাসী জানতে পারলে তাদের মাঝে করোনা আতঙ্ক পেয়ে বসে। দিনভর উপজেলা জুড়ে চলে তুলকালাম।
এ নিয়ে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হলে বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ওই ব্যক্তিকে নিজ বাসায় আগামী ১৪ দিন ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকার নির্দেশে দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়।
আবু আজাদ/এমএফ/এমকেএইচ