প্রবাস

যেমন আছেন ভারতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৩ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

করোনাভাইরাসের কারণে চীনের হুবেই প্রদেশের বিভিন্ন শহরে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৩ জন রয়েছে ভারতে। এসব শিক্ষার্থীদের দিল্লি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

Advertisement

কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন শিয়ান, ৯ জন জিংমেন এবং ৪ জন ইচাং শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। বেইজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় তারা দিল্লিতে ফিরেছে।

কোয়ারেন্টাইনে কেমন আছে এ সম্পর্কে ভারতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, দিল্লি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে তাদেরকে একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে নাস্তা করতে হয়। নাস্তাতে লুচি, সবজি/ছোলা, দুধ, চা, কোনোদিন আবার পাওরুটি, বাটার, জেলি দেওয়া হয়। নাস্তার পর প্রতিদিন তাদেরকে মেডিকেল চেকাপ করতে হয় সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে। এরপর গোসল সেরে দেড়টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে হয়। এই সময়ের মধ্যে ক্লিনাররা এসে ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।

জানা গেছে, দুপুরে খাওয়ার পরে কেউ ঘুমিয়ে, কেউবা লুডু, দাবা, টেবিল টেনিস খেলে সময় কাটায়। কোয়ারেন্টাইনে থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। তারপর বিকেলের নাস্তা।

Advertisement

বিকেলের নাস্তা দেয়া হয় ৫টার মধ্যে, চা আর বিস্কুট। রাত ৮টা থেকে ৯টার রাতে খাবার খেয়ে নিতে হয়।

তারা জানায়, বাংলাদেশিদের জন্য একটা আলাদা ফ্লোর আছে। একরুমে দু’জন করে রাখা হয়েছে। একপাশে ছেলে অন্যপাশে মেয়ে। নিত্য- প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সাবান, সেন্ডেল, হ্যান্ড ওয়াশ, সানিটাইজার, হ্যান্ডরাব, ওয়াটার বোতল, টিস্যু, কেটল, তোয়ালে থেকে শুরু করে সবই ভারতীয় বিমান বাহিনী সরবরাহ করছে।

ভারতে আসার প্রসঙ্গে তারা জানায়, ফ্লাইট জটিলতার কারণে সরাসরি বাংলাদেশে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তারা তাদের সঙ্গে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বেইজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশটিতে অবস্থান করছে।

ভারতীয় দূতাবাসের সার্বিক সহযোগিতায় তারা দেশটিতে এসেছে। এ কঠিন সময়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য ভারতীয় সরকার, বিমান বাহিনী এবং ভারতীয় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান তারা।

Advertisement

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চীনকে সহায়তা করার লক্ষ্যে ভারত ২৬ ফেব্রুয়ারি উহানে বিমান বাহিনীর সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানের মাধ্যমে সাহায্য সামগ্রী পাঠায়। নয়াদিল্লিতে ফিরতি ফ্লাইটে ৭৬ জন ভারতীয় এবং ৩৬ জন বিদেশি নাগরিক ছিল।

বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে সাতটি দেশের নাগরিক ছিল। তার মধ্যে চীনের ৬ জন, বাংলাদেশের ২৩, মালদ্বীপের ২, মিয়ানমারের ২, দক্ষিণ আফ্রিকার ২, মাদাগাস্কার ১ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ জন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার পর চীনে বসবাসরত মানুষের মাঝে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় উহান শহরটিকে অবরুদ্ধ করে দেয় চীন। এর আগে এ ভাইরাসের কারণে দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান থেকে আটকে পড়া ৩১২ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৩শ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪ হাজার ৬৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৬৮ হাজার ২৮৫ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

১২৪টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬৯ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮২৭ জনের।

অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩৫৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৬৯ এবং মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২৮১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৪৮ জন।

স্পেনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২৭৭ এবং মৃত্যু ৫৫, জার্মানিতে আক্রান্ত ১ হাজার ৯৬৬ এবং মৃত্যু ৩। যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩২২ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের।

সুইজারল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত ৬৫২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে ৬৯৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৭ জন। অপরদিকে জাপানের বিভিন্ন স্থানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩৯ এবং মৃত্যু ১৫।

নরওয়েতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৯, ডেনমার্কে ৫১৪, নেদারল্যান্ডে আক্রান্ত ৫০৩ এবং মৃত্যু ৫, সুইডেনে আক্রান্ত ৫শ, মৃত্যু ১, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৪৫৬ এবং মৃত্যু ৮, বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৩১৪ এবং মৃত্যু ৩, কাতারে আক্রান্ত ২৬২, অস্ট্রিয়ায় ২৪৬, বাহরাইনে ১৯৫, সিঙ্গাপুরে ১৭৮, মালয়েশিয়ায় ১৪৯, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ১৩৯ মৃত্যু ৩।

এছাড়া হংকংয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১২৬ এবং মৃত্যু ৩, কানাডায় আক্রান্ত ১০৯ এবং মারা গেছে একজন, গ্রিসে আক্রান্ত ৯৯, ইসরায়েলে ৯৭, চেক প্রজাতন্ত্রে আক্রান্ত ৯৪, আইসল্যান্ডে ৮৫, আরব আমিরাতে ৭৪, কুয়েতে ৭২, ইরাকে আক্রান্ত ৭১ এবং মৃত্যু ৭, মিসরে আক্রান্ত ৬৭ এবং মৃত্যু ১।

সান মারিনোতে আক্রান্ত ৬২ এবং মৃত্যু ২, ভারতের আক্রান্ত ৬২, লেবাননে আক্রান্ত ৬১ এবং মৃত্যু ২, থাইল্যান্ডে আক্রান্ত ৫৯ এবং মৃত্যু ১, ফিনল্যান্ডে ৫৯, পর্তুগালে ৫৯, স্লোভেনিয়ায় ৫৭, ব্রাজিলে ৫২, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৪৯ এবং মৃত্যু ২, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৮ এবং মৃত্যু হয়েছে একজনের।

অপরদিকে রোমানিয়ায় আক্রান্ত ৪৭, সৌদি আরবে ৪৫, আয়ারল্যান্ডে আক্রান্ত ৪৩ এবং মৃত্যু ১, ভিয়েতনামে ৩৮, ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্ত ৩৪ এবং মৃত্যু ১, পোল্যান্ডে ৩১, ফিলিস্তিনে ৩০, জর্জিয়ায় ২৪, চিলিতে ২৩, কোস্টারিকায় ২২, আলজেরিয়ায় ২০, রাশিয়ায় ২০, আর্জেন্টিনায় আক্রান্ত ১৯ এবং মৃত্যু ১।

ক্রোয়েশিয়ায় ১৯, পাকিস্তানে ১৯, ওমানে ১৮, ইকুয়েডরে ১৭, পেরুতে ১৭, এস্তোনিয়ায় ১৬, আলবেনিয়ায় আক্রান্ত ১৫ এবং মৃত্যু ১, হাঙ্গেরিতে আক্রান্ত ১৩, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩, মেক্সিকোতে ১২, সার্বিয়ায় ১২, আজারবাইজানে ১১, ব্রুনেইতে ১১, ম্যাকাউতে ১০, লাটভিয়ায় ১০, স্লোভাকিয়ায় ১০, বেলারুসে ৯, কম্বোডিয়ায় ৯, পানামা ও মালদ্বীপে ৮ জন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

অপরদিকে বুলগেরিয়া, আফগানিস্তান, লুক্সেমবার্গ, উত্তর মেসিডোনিয়া, তিউনিসিয়া, বসনিয়ায় ৭ জন করে, মরক্কো, সাইপ্রাস, মালটায় ৬ জন করে, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, নিউজিল্যান্ড, ফেঞ্চ গুয়েনা, প্যারাগুয়েতে ৫ জন করে, সেনেগালে ৪, কম্বোডিয়া, লিথুনিয়া, বাংলাদেশ, কিউবা, মার্টিনিক, মলদোভায় ৩ জন করে, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, বলিভিয়া, বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চ্যানেল আইসল্যান্ড, ফায়েরো আইসল্যান্ড, হন্ডুরাস, জ্যামাইকা এবং সেইন্ট মার্টিনে ২ জন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

আন্দোরা, আর্মেনিয়া, জর্ডান, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগো এবং তুরস্কে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

এমআরএম/এমকেএইচ