মাত্র ছয়দিনের চিকিৎসায় করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন ১০৩ বছরের এক বৃদ্ধা। ঝাং গুয়াং ফেন নামের ওই বৃদ্ধা উহানের বাসিন্দা। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
Advertisement
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ২১৭ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৪ হাজার ২৯৯ জন। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত ৬৬ হাজার ৫৬৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
বিশ্বের ১১৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৭৮ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৩১ জনের।
ঝাং গুয়াং হলেন চীনের সবচেয়ে বয়স্ক রোগী, যিনি এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হলেন। এর আগে যিনি সুস্থ হয়েছিলেন তার বয়স ছিল ১০১ বছর।
Advertisement
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সৌভাগ্যবতী ওই বৃদ্ধাকে শয়নরত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে বের করা হচ্ছে। তাকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন একদল স্বাস্থ্যকর্মী। তাকে নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদেরকে বিজয়সূচক ‘ভি চিহ্ন’ প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
ডেইলি মেইল জানায়, ১ মার্চ ঝাংয়ের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। পরে তাকে উহানের লিয়ুয়ান অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতালের ভর্তি করা হয়।
তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন তার শরীরের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না।
হাসপাতালটির একজন ম্যাট্রন লিও জেনহুই। চুশিয়ান মেট্রোপলিস ডেইলি নামের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ঝাংকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন শরীরের নাজুক অবস্থার কারণে চামচে করে তাকে খাবার খাওয়াতে হতো। এমনকি নার্সরাই তার ডায়াপার পরিবর্তন করে দিতেন। তবে সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন ও নিউট্রিশন থেরাপির কারণে তার শরীরে দ্রুত উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। আস্তে আস্তে নড়াচড়া শুরু করে দেন।’
Advertisement
এর আগে দাই নামের এক শতবর্ষী (১০১ বছর) সপ্তাহখানেক হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনিও উহানের বাসিন্দা।
লি লাই নামের হাসপাতালটির একজন ম্যাট্রন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন তিনি (দাই) হাসপাতাল ত্যাগ করছিলেন তখন তাকে খুবই সুস্থ-সবল দেখা গেছে।’
চীনে সংক্রমণের শিকার ৪৪ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রথম বড় আকারে যে বিশ্লেষণটি পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় যে, মধ্য বয়সীদের তুলনায় বয়ো-বৃদ্ধদের মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার ১০ গুণ বেশি।
৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম-সাড়ে চার হাজার জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে মাত্র ৮ জন। আর যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার ৫ গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, চীনে ভাইরাস আক্রান্ত ৭০ শতাংশ মানুষই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চীনে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার ৫৬৩ জন করোনামুক্ত হয়েছেন।
সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস জেনেভায় সংস্থাটির সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভাইরাসটি ইতোমধ্যে অনেক দেশেই পা রেখেছে। এটি প্যানডেমিকে (মহামারির চেয়ে বড় সংকট) পরিণত হওয়ার হুমকি এখন সত্য হতে চলেছে। অল্প কিছু দেশ সম্প্রদায়ভিত্তিক সংক্রমণ আটকাতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে এ নিয়ে বিশ্ব নেতাদের এখনই হাল ছেড়ে দেয়ার দরকার নেই। চীনে ৮০ হাজারের বেশি করোনা রোগীর ৭০ শতাংশই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।’ দেশটিতে মহামারি প্রায় শেষের পথে বলেও মন্তব্য করেন ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক।
এসআর/এমকেএইচ