আন্তর্জাতিক

অবরুদ্ধ ইতালিতে মৃত্যু-আক্রান্ত বাড়ছে, স্বাভাবিক হচ্ছে চীন

মহামারি করোনাভাইরাসে অবরুদ্ধ ইতালিতে গতকাল মঙ্গলবার ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন। রেকর্ড তৈরি হয়েছে মৃত্যুতে। স্থগিত করা হয়েছে বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থার ফ্লাইট। এছাড়া উৎপত্তিস্থল চীনের পর সবচেয়ে বেশি করোনা কবলিত ইতালির প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করেছে।

Advertisement

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যে উহান শহরে, সেখানে প্রথমবারের গতকাল মঙ্গলবার সফরে গেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং। চীন কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ভয়াবহ করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের সফর তারই বহিঃপ্রকাশ।

সরকারি হিসাবে চীনে এখন প্রতিনিয়ত আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমছে। গত জানুয়ারি থেকে মৃত্যু ও আক্রান্তের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার চীনে সর্বনিম্ন ১৯ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে ১৭ জন গতকাল মৃত্যুর হারও ছিল রেকর্ড সর্বনিম্ন।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে কারখানা ফের চালু করতে বড় কিছু প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে চীন ভয়াবহ এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। আজ বুধবারই নতুন করে এ অনুমতি দিল চীন। তবে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা বেড়েই চলেছে।

Advertisement

 

এদিকে ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩১ জনে। দেশটিতে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১০ হাজার ১৫০—চীনের পর যা সর্বোচ্চ। গত ডিসেম্বরে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশে হুবেইয়ের রাজধানী শহর উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন এই নভেল করোনাভাইরাসটি। ভাইরাসটি চীনের পর সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ভূমধ্যসাগর উপকূলের দেশ ইতালিতে। চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে তা বাড়ছেই।

যখন চীনের হুবেই প্রদেশসহ বেশি কিছু অঞ্চলে নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও শিথিল করা হচ্ছে তখন ইউরোপের দেশগুলোতে তা জোরদার করা হচ্ছে একের পর এক। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চীনের অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থানে চলে গেছে ইউরোপের দেশগুলো।

 

অঞ্চলটির বেশি কিছু বিমান পরিবহন সংস্থা আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য ইতালিতে চলাচলকারী তাদের ফ্লাইট কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে ইউরোপের অনেক দেশ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর, সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়া জানিয়েছে, তারা ইতালির সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে আরেক ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া তাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে রেল ও আকাশপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

Advertisement

স্লোভেনিয়া ও অস্ট্রিয়ার এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এটাকে ‘খারাপ সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তার দেশ এখন মহামারি ভাইরাসটি বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়ে আছ বলেও সতর্ক করেছেন। ইতালি-স্পেনের যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন করার ঘোষণা দিয়েছে চিলি।

 

চীনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও ইতালিতে এখন ৬ কোটি মানুষ অবরুদ্ধ। সেখানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও জনসমাগমে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুজেপ্পে কন্টে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জরুরি ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অনুমোদন নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে স্কুল, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব এবং অন্যান্য ভেন্যু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ বিধি-নিষেধ বহাল থাকবে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।’ তবে সেখানে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

এসএ/এমকেএইচ