খুব সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ফেন্সি কার্প গার্ডেনের সড়ক ধরে হাঁটছিলেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান। হঠাৎ মাছের পানি ঝাঁপটানোর শব্দে দৃষ্টি যায় ফেন্সি গার্ডেনের দিকে। প্রথমে ভূমিকম্প ভাবলেও দীর্ঘ সময় পর তা বন্ধ হওয়ায় পাশের পুকুরে দৃষ্টি যায়। সেখানকার পানি ছিল শান্ত। খেয়াল করলেন মাছগুলো যেন লাফাচ্ছে। বড় কোনো ক্ষতির শঙ্কায় ঘাবড়ে যান তিনি।
Advertisement
মাছের এমন আচরণে হতবাক হয়ে অজানা শঙ্কায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে। তিনি দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। মাছের আচরণ দেখে অনেকটা উৎফুল্ল হয়ে জানালেন, এখন এ প্রজাতির মাছের প্রজননের সময়। তাই ঘর খুঁজছে (ডিম ছাড়ার উপযুক্ত স্থান) রঙিন মাছগুলো। খুব কম সময়ের মধ্যে মাছগুলোর জন্য ঘরের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। দ্রুতই পাশের একটি পুকুর থেকে কচুরিপানা এনে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শান্ত হয়ে যায় বিদেশি রঙিন মাছগুলো।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান জানান, ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে কিছু রঙিন কই কার্প আনা হয়েছিল। একেকটি মাছ ৫-৭ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের আয়ুষ্কাল ৫-৭ বছর। ফেন্সি কার্প গার্ডেনে লাল, কমলা, সাদাসহ কয়েক রঙের কই কার্প রয়েছে। উন্মুক্ত পানিতে এরা স্বাধীনভাবে ছুটে বেড়ায়। কোথাও খাবারের সন্ধান পেলে প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। সেখানে দলে দলে ভেসে ওঠে এবং ছোটাছুটি করে ভিড় জমায়।
তিনি জানান, আমাদের দেশে বসন্তে ওই মাছের প্রজনন হতে দেখা গেছে। এ সময় স্ত্রী মাছের পেটে ডিম হয়। পুরুষ মাছে শুক্রাণু তৈরি হয়। প্রজননকালে পুরুষ ও স্ত্রী মাছ জলাশয়ের কিনারে প্রজননের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকে। স্ত্রী মাছকে পুরুষ মাছ তাড়া করে বেড়ায়। তখন পানিতে বেশ শব্দ সৃষ্টি হয়।
Advertisement
তিনি আরও জানান, প্রজননকালে পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের পেটে আঘাত করে। একপর্যায়ে স্ত্রী মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। পুরুষ মাছ ওই ডিমের ওপর শুক্রাণু ছেড়ে দেয়। এতে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। অনেক সময় নিষিক্ত ওই ডিম পরিণত মাছে খেয়ে ফেলতে পারে। তাই ডিমগুলো পুকুরের অলাদা স্থানে রেখে যত্ন নিলে তা থেকে পোনা উৎপন্ন হবে।
শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল্লাহ জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ মাসে এরা প্রজনন করে। প্রতিটি মাছ ২-৩ হাজার ডিম দেয়। ডিমসহ কচুরিপানাগুলো পুকুরের পানিতে আলাদা করে হ্যাচিং নেটের ভেতরে রাখা হয়। এর ৭২ ঘণ্টা পর ডিমগুলো ফুটে পোনা তৈরি হয়।
তিনি জানান, এক কেজি ওজনের প্রতিটি মাছ ৩-৪ হাজার টাকা। ২০-৩০ দিন বয়সী পোনা মাছ ২শ’ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়। ১ বছর বয়সী মাছ প্রজননক্ষম হয়। খাওয়ার চেয়ে অ্যাকুরিয়ামে পালনের জন্য এ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শিহাব খান/এসইউ/জেআইএম
Advertisement