দেশের গবেষণা ও প্রবন্ধ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২২’ পাচ্ছেন বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন। আগামী ডিসেম্বরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার হাতে এই সম্মাননা অর্থ ও পদক তুলে দেওয়া হবে। একনজরে সোনিয়া নিশাত আমিনড. সোনিয়া নিশাত আমিন বাংলাদেশের গবেষণা অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য এক নাম। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি এখানে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই বিভাগ থেকে ১৯৭৭ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমাজবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘকাল ধরে ড. আমিন উনিশ এবং বিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাস বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই বিষয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে তার ত্রিশটিরও বেশি প্রবন্ধ দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড অব মুসলিম উইমেন ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল : ১৮৭৬-১৯৩৯’ বিষয়ে গবেষণার জন্য ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. আমিন তার পিএইসডিতে তিনটি প্রজন্ম বা ৬০ বছরজুড়ে বাংলার ১৯-২০ শতকে (মুসলিম) নারীর আধুনিক ও স্বাধীন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন। সেই অর্থে তাঁকে বাঙালি নারীর বিবর্তনমূলক সামাজিক ইতিহাসের একজন বিশেষজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করা চলে।ড. আমিনের পিএইচডি গবেষণা গ্রন্থ চারশ’ বছর পুরানো প্রকাশনা সংস্থা EJBRICK থেকে প্রকাশিত (১৯৯৬ : নিউইয়র্ক, লেইডেন) হয়। পরে সেটি বাংলায় অনুবাদ হয়ে প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে। প্রকাশকাল ২০০২।ড. আমিন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় লেখালেখি করেন। ইংরেজি মাধ্যমে কাজ করার পেছনে তার উদ্দেশ্য হলো উপমহাদেশের নারী আন্দোলনের সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা। ওয়ার্ল্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অব উইমেন’স হিস্টোরি এবং অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফিতে প্রকাশিত রোকেয়ার জীবনীটা তিনিই লিখেছেন। অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন এভাবেই রোকেয়া, প্রীতিলতা থেকে শহিদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীনের মতো বঙ্গদেশের সাহসী নারীদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন।গবেষণার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যচর্চাও তিনি অব্যাহত রেখেছেন। বাংলায় তিনি একটি নন-ফিকশনধর্মী উপন্যাস লিখেছেন। দুটি বাংলা গ্রন্থ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। নারীবিষয়ক উল্লেখযোগ্য গবেষণা ও প্রকশনার জন্যে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ কর্তৃক আতোয়ার হোসেন স্বর্ণপদক পান। অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন ও তার সহকর্মী মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে বছর তিনেক পূর্বে জেন্ডার অ্যান্ড হিস্টোরি কোর্সটি প্রবর্তন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পোস্ট-ডক ফেলো ছিলেন। পাশাপাশি বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ড. আমিন তরুণী বয়সে কলকাতায় অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভাল কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখেন।উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিক অথবা সাহিত্য-গবেষককে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ-পর্যন্ত যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তারা হলেন- সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, ড. সনজীদা খাতুন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, ড. নিয়াজ জামান এবং জাহানারা নওশিন। এলএ/আরআইপি
Advertisement