অর্থনীতি

রমজানে করোনার প্রভাব, কতটুকু প্রস্তুত টিসিবি?

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। নাজেহাল হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। এবার ঠিক রমজানের আগেই নতুন করে দেখা দিয়েছে মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের ছোবল। ইতোমধ্যে এ কারণে বিশ্বব্যাপী আমদানি-রফতানিতে ধস নেমেছে। তাই আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর সরকার। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে বাজারে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

Advertisement

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলা করে মুজিববর্ষ আর রমজান মাসে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবিকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো সংস্থাটি নিজেই রমজানের পণ্য আমদানি জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে। সব মিলিয়ে এবার রমজানের আগেই অন্যবারের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশি পণ্য নিয়ে টিসিবিকে মাঠে নামতে বলা হয়েছে।

গত ৪ মার্চ রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ রাখাসহ অন্যান্য ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নিত্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহ, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে নিত্যপণ্যের মজুত, সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার বিষয়টি কঠোরভাবে বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এসব বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতে বলা হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব এবং রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কঠোর দৃষ্টি রাখছে। চীনে করোনাভাইরাসের পাশাপাশি তাদের হলি ডে (ছুটির দিন) ছিল, তাই আমদানি-রফতানি কিছুটা কমে যায়। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে চীন। দেশটি থেকে বেশকিছু পণ্য আমদানির জন্য এলসিও খোলা হচ্ছে।

Advertisement

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার আমরা টিসিবিকে রমজান কেন্দ্রিক পণ্য বিক্রির কার্যক্রম জোরদার করতে বলেছি। খোলা ট্রাকে বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে টিসিবি বেশকিছু পণ্য সংগ্রহ করেছে, আরও সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।

‘আপনারা দেখেছেন, পেঁয়াজের দাম যখন খুব বেশি হয়ে গিয়েছিল তখন টিসিবি ৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করে। এখনও সেটা অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত টিসিবি প্রায় কম দামে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। এই কার্যক্রম রমজানে আরও বেগবান হবে। যদি প্রয়োজন হয় অন্য পণ্যও টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রমজানের সময় ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন পণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল ও খেজুরের আমদানি বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তারা যেন এসব পণ্যের আমদানি ও মজুত বাড়ান। যাতে ওই সময় দেশের মানুষ এসব পণ্য ন্যায্য দামে কিনতে পারেন। এসব উদ্যোগের ফলে রমজানে বাজার স্বস্তিতে থাকবে।

‘এবার রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। চাহিদার তুলনায় আমদানি ও মজুত পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে’- জানান তিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। বিশেষ করে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম যাতে ওই সময় না বাড়ে সেদিকে সবচেয়ে বেশি নজরদারি রাখা হবে। রজমান ও করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে কোনো ব্যবসায়ী মনোপলি ব্যবসা করছে কি-না, বিষয়টি কঠোরভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এবার যাতে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে সে জন্য বড় পরিসরে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, মসুর ডাল, ভোজ্য তেল ও খেজুর বিক্রি করা হবে। এবারই প্রথম পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় এ পণ্যটিও টিসিবি পণ্যে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে খেজুর ছাড়া বাকি পণ্য বাফার স্টক (আপৎকালীন মজুতের গুদাম) হিসেবে সারা বছরই ৫০০ থেকে এক হাজার টনের বেশি মজুত থাকে। চলতি বছরও একই পরিমাণ মজুত রয়েছে।

এছাড়া রোজার বাড়তি চাহিদা পূরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ পণ্য আমদানির জন্য টিসিবিকে নির্দেশ দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পণ্য আমদানি ও স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে টিসিবি। এরই মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে আড়াই হাজার টন ছোলা আমাদির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বছর ছোলা আমদানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে মোট আট হাজার টন। যা গত বছর ছিল এক হাজার ৫০০ টন। এর বাইরে অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে আরও দুটি টেন্ডার দেয়া হয়েছে। এগুলোর ক্রয় অনুমোদনও শিগগিরই হবে।

টিসিবি সূত্রে আরও জানা যায়, এ বছর খেজুর আমদানি করা হবে ৩০০ থেকে ৫০০ টন। গত বছর আমদানি হয়েছিল ১০০ টন। এছাড়া ভোজ্য তেল বছরব্যাপী আমদানি করছে টিসিবি। গত বছর টিসিবি ভোজ্য তেল আমদানি করে তিন হাজার টন। এবার তা বাড়িয়ে সাত হাজার টন আমাদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর চিনির আমদানি ছিল সাড়ে তিন হাজার টন। এ বছর তা পাঁচ থেকে ১০ গুণ বাড়ানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চিনির আমদানি ছাড়াবে ২৫ হাজার টন।

এছাড়া মসুর ডাল গত বছর ছিল দুই হাজার ৫০০ টন। চলতি বছর এ পণ্যটির আমদানিও কয়েক গুণ বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ১২ মার্চের মধ্যে রোজার পণ্য আমদানির সব টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে টিসিবি। এর মধ্যে যেগুলোর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে সেই পণ্যগুলো আমদানি শুরু হবে।

এবার রাজধানীর খোলা বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য ট্রাকের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করে ৩৫০টি করা হচ্ছে। এর বাইরে ১০টি সেলস সেন্টার, নতুন চারটি ক্যাম্প অফিস এবং আটটি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমেও এসব পণ্য সরবরাহ করা হবে- জানায় টিসিবি।

এমইউএইচ/এমএআর/জেআইএম