জাতীয়

ওদের কষ্টের কথা ফুটে উঠেছে রক্তমাখা পোস্টারে

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি পোস্টার হাতে দাঁড়িয়েছিল পরেশ চন্দ্র ভৌমিক। সাধারণত পোস্টারে সাইনপেনের কালো কালিতে বিভিন্ন দাবি দাওয়া লেখা হলেও তার হাতের পোস্টারটি উপস্থিত সকলের নজর কাড়ছিল বার বার। কারণ পোস্টারটিতে লাল রক্ত দিয়ে উই ওয়্যান্ট রি-এক্সাম (আমরা পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা চাই) দাবির কথা লেখা ছিল। চিকন চাকন গড়নের এই তরুণের  গোঁফও ঠিকমতো গজায়নি। কিন্তু অধিকার আদায়ের জন্য গত তিন সপ্তাহ ধরে নিয়মিত প্রখর রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রশ্নবিদ্ধ সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে রাজপথে রয়েছে।  শনিবার দুপুর আনুমানিক একটায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে পরেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, বৃহস্পতিবার পূর্বঘোষিত স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও কর্মসূচি চলার সময় পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করে। পুলিশের লাঠির আঘাতে আন্দোলনকারী অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হয়ে আহত হয়। পুলিশ তথা সরকারের এহেন আচরণের প্রতি ঘৃণা জানাতে তারা আহতদের শরীরের তাজা রক্ত দিয়ে এই ব্যতিক্রমধর্মী পোস্টারটি লিখেছেন। পরেশ জানান, ভর্তি পরীক্ষায় ৬৮ নাম্বারের বেশি পেয়েছেন। তিনি আশা করেছিলেন  অবশ্যই যে কেনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন।  কারণ জানতে চাইলে পরেশ জানান, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় কখনও এত বেশি নম্বর (৯৮) বিগত বছরগুলোতে ওঠেনি। জাহিদুল ইসলাম আফতাবউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৭০ পেয়েছেন।  তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ৭০ পেয়ে মেডিকেল চান্স না পাওয়ার রেকর্ড নেই। গত বছর মাত্র ৫৬ পেয়েও মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পেয়েছে বলে জানান জাহিদুল। পরেশ ও জাহিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে নম্বর এতো বেশি ওঠেছে। তা না হলে তারা দুজনই কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতেন। পরীক্ষায় সুযোগ না পেয়ে তারা যতটা না কষ্ট পেয়েছেন তাদের বাবা মায়েরা তার চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছেন। কারণ তাদের বাবা মায়ের ১০/১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ের জন্য প্রশ্ন কিনে দেয়ার ক্ষমতা নেই। ভেবেছিলেন হয়তো সুষ্ঠু পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করে সন্তান সুযোগ পাবে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।অল্পবয়সী এই তরুণরা জানায়, যত রক্ত ঝরুক না কেন তারা আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না। আজ বিকেল ৩টায় তারা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ দিবেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন।এমইউ/এসকেডি/এমএস

Advertisement