দেশজুড়ে

আতঙ্কে ২শ বিদেশি নাগরিক, প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা

ইতালি ও জাপানি নাগরিক খুন হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শিল্পাঞ্চলে কর্মরত প্রায় ২শ বিদেশি নাগরিক এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার বিষটি জোরদার করলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। এদিকে, সন্দেহভাজন ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় কার্যকরী ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেও কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের ভয় কাটছে না। অনেকেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে দেশ ছাড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় শিল্প মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকমান হোসেন বলেন, রূপগঞ্জে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে কর্মরত নাগরিকরা নিরাপদে রয়েছেন।রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রূপগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় অন্তত ২শ বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। আমরা নিজে গিয়ে এ সকল বিদেশি নাগরিকদের খোঁজখবর নিচ্ছি। তাদের নিরাপত্তার জন্য রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শতর্ক রয়েছে। রূপগঞ্জে অবস্থারত বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীন নয় বলে জানান তিনি। রূপগঞ্জ শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, ইউনাইটেড লেদার, এসিএস টেক্সটাইল, সিটি অয়েল মিল, রবিন টেক্স বাংলাদেশ লি., এসিএস টাওয়েল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, লিতুন ফেব্রিক্স, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, টি ওয়ান ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জাপান, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, তাউওয়ান, বৃটিশ, থাইল্যান্ড, চীনা, ফিলিপাইন, জার্মানি, কোরিয়া, ভারত ও মালয়েশিয়া, জার্মান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশি নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে তেতলাবোর এসিএস টেক্সটাইলে ৮৬ জন, রূপসীর সিটি অয়েল মিলে ১০ জন, বাংলাদেশ এডিভয়েলে ২৫ জন, টি ওয়ান ইন্টারন্যাশনালে ২০ জন, আরিয়াবোর অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে ১২ জন, বরপা লিতুন ফেব্রিক্সে ২ জন, ভুলতার বেনেটেক্সে ১৫ জন, ভুলতার রবিনটেক্সে ৩ জন, ইউনাইটেড লেদারে ১০ জন। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরাও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছে বলে জানা গেছে। এসব নাগরিক এখন ভয়ে ভয়ে দায়িত্ব পালন করছে। কর্মরত প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে বের হচ্ছে খুব সাবধানে। অনেকে বাংলাদেশে কাজ করতে অনীহা জানাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন প্রতিষ্ঠানগুলো। রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাহাদুর বেপারী বলেন, আমরা বিদেশি কর্মকর্তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এসিএস ( পাকিস্তানি মিল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আগভাগী বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল বিদেশি নাগরিক নিরাপদে আছে। প্রশাসনিকভাবেও তাদের দেখভাল করা হচ্ছে। তাদের বাসভবনের চারপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মীসহ তাদের চলাচলের সময় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী সঙ্গে দেয়া হচ্ছে।প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মো. কবীর হোসেন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা আগে থেকেই সর্তক। এখানে বহিরাগত লোক ঢুকে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই কর্মরত অধিকাংশ বিদেশি নাগরিকরা বসবাস করেন।  রূপগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই। আমরা সর্তক আছি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ রয়েছে বিদেশি নাগরিকদের উপর সব সময় নজরদারি করতে।গোয়েন্দা শাখার (ডিএসবি) আরেক কর্মকর্তা মো. হানিফ হাওলাদার জানান, রূপগঞ্জের শিল্প-কারখানায় প্রায় ২শ এর বেশি বিদেশি নাগরিক রয়েছে। এদের প্রতি নজর রাখার নির্দেশ রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের উপরও নজরদারি করা হচ্ছে।      এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) একেএম জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি নাগরিকদের রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে কোনো ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই। দেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতি এড়াতে আমরা শিল্পাঞ্চলে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করেছি। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি নাগরিকের খোঁজখবর নিচ্ছি। জামায়াত-শিবিরসহ যে কোন ব্যক্তি দ্বারা নাশকতা রোধ করতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে ৭ শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে। মীর আব্দুল আলীম/এসএস/এমএস

Advertisement