প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২২ জন আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ২৭ জন। বিশ্বের ১১৫টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগটি ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সহজেই সুস্থ ব্যক্তিরা আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতার বিকল্ব নেই। দৈনন্দিন লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত টাকার ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তারা।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চীনে। সেখানে ৮০ হাজার ৭৫৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ১৩৬ জন।
চীনের পর ইতালিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে করোনা। সেখানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ১৭২ এবং মৃতের সংখ্যা ৪৬৩।
Advertisement
চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে ৭ হাজার ৫১৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৫৪ জন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শুধু মানব শরীরে নয়, সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পারে ফোনের স্ক্রিনের মতো কঠিন পদার্থের সঙ্গেও। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফোনের স্ক্রিনের মতো কঠিন পদার্থ করোনাভাইরাস সংক্রমণের একটি সম্ভাব্য মাধ্যম। কোনোভাবে এই ভাইরাসের জীবাণু এসব পদার্থের সংস্পর্শে এলে টানা এক সপ্তাহ পর্যন্ত থেকে যেতে পারে সেখানে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কাশি, সর্দির মাধ্যমে হ্যান্ডেল, হ্যান্ডসেটের মতো পদার্থে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনার জীবাণু। এবং এক সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানে থেকে যেতে পারে। এজন্য দিনে দুইবার অ্যালকোহল মিশ্রিত টিস্যু দিয়ে ফোনের স্ক্রিন পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে ঘনঘন হাত হাত-মুখ ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। হাত ধোয়ার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন তারা-অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। কাশি, সর্দির শিষ্টাচার মানতে বলছেন তারা।
Advertisement
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু টাকা হাতে হাতে বদলায়, এজন্য এই রোগের জীবাণু সহজেই অন্যের শরীরে ছড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই টাকা ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে বলেছেন তারা। অন্যথায় এতে লুকিয়ে থাকা করোনার জীবাণু অজ্ঞাতসারেই শরীরে বাঁধতে পারে বাসা।
এর আগে একাধিক গণমাধ্যমের খবর প্রকাশ পায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষের পাশাপাশি ব্যাংক নোটকেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এতে বলা হয়, ব্যাংক নোটগুলোকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার আগে উচ্চ তাপমাত্রা বা আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মির মাধ্যমে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে নেয়া হচ্ছে।
একই পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় উত্তর কোরিয়ায়ও। করোনাভাইরাস যাতে দ্রত ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য কিছু ব্যাংক নোট পুড়িয়ে ফেলে দেশটি। শুধু দেশই নয়; নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত কাপ ও গ্লাস ব্যবহার সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেয় আমেরিকান কফি কোম্পানি স্টারবাকস।
বিশেষজ্ঞতা সতর্ক করে বলেছেন, শুধু কাগজে নোট নয়; কাগজে নোটের মতো ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাগজে নোট ব্যবহারের পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। নোট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার পরামর্শও দিয়েছে হু।
একই পরামর্শ দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। চীনের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ১৬১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২৩৭ জন।
সূত্র : টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল, ওয়ান ইন্ডিয়া
এসআর/এমএস