জাতীয়

মানবপাচারের অন্যতম রুট নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী

মানবপাচারের অন্যতম বড় রুট নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী । এই রুট দিয়ে গত দু বছরে অসংখ্য মানুষ কাজের সন্ধানে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া গেছে। কিন্তু এরপর থেকে তাদের অনেকেই এখন নিখোঁজ। দালালরা সাগর পথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া নেয়ার পর কয়েক মাস তারা সেখানে অবস্থান করেন। পরে সেখানে ধড়া পড়ে জেল খাটেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। প্রায় ৭০ বছর বয়সী আব্দুর রব, নিখোঁজ দুই সন্তানের ছবি হাতে প্রায় পাগল হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি বলেন ,দুইটা ছেলে আমার । কাজের সন্ধানে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিল দালালের কাছে। এখন ওদের কোনো খোঁজ পাই  না। বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটাও জানি না। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে মধ্যবয়সী দিনমজুর সোনা মিয়ার জীবনেও। তিনি বলেন, আমার ছেলে আর জামাইকে নিয়ে গেছে দালালরা। ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নিয়ে যাবে বলেছে । দু’বছর হলো। দালালের কোন পাত্তাই পাচ্ছি না। তাদের সঙ্গে আরো ১৬ জনকে নিয়েছে। এখন একজন মানুষেরও কোনো খোঁজ নেই।পাঁচ মাস সাগরে ভেসে থাকার পর থাইল্যান্ড উপকূলে ধরা পড়েন বাবু মিয়া।তিনি বলেন, আড়াইহাজার থেকে প্রথমে তাকে কয়েকজনের সঙ্গে নেয়া হয়েছিলো যাত্রাবাড়ীতে। সেখানে নিয়ে হোটেলে রেখেছে দুদিন। সেখানে থেকে রাতে চট্টগ্রাম নিয়েছে। পরে রাত ২টার দিকে একটা ব্রিজের নিচে নিয়ে একটা নৌকায় ওঠায়। সেখান থেকে চারদিন পরে বার্মার কাছে একটা জাহাজে তুলে দেয়। জাহাজ কোথায় যেন গেছে, শুধু পানি আর পানি। চার পাঁচ মাস চলে গেলো কোনো খবর নেই। তারপর থাইল্যান্ড আমারা নামাতে পারেনি। দালালরা আমাদের ফেলে দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। পরে মাছের নৌকার লোকজন আমাদের পেয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে তারা উদ্ধার করে শহরে নিয়ে তদন্তের পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে।অভিভাসন কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন , নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদীর পাচদোনা পর্যন্ত এলাকাটিই ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে দালাল চক্রের নিরাপদ আস্তানা । পাচার বন্ধে এখনো যথাথথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি সচেতনতা তৈরির জন্যেও তেমন কোন উদ্যোগ নেই আর সে কারণেই থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া উপকূলের মর্মস্পর্শী ঘটনা প্রকাশের পরেও পাচারকারীরা এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।এ বিষয়ে আড়াইহাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ বশির উল্লাহ বলেন, দালালরা অনেক সক্রিয় । তারা এমনভাবে বলে, আর এ এলাকার মানুষকে লোভীও বলা যায় আবার দরিদ্রও বলা যায়। বিদেশে যাওযার জন্যে ভিটে বাড়ি বিক্রি করে । সেসময় কিন্তু কাউকে তারা কিছু জানায় না । পরে প্যাচে পড়ে আমাদের জানায় । আবার টাকা দেয়ার কারণে তাদের যেতেও হয় । চর এলাকায় কিছু দালাল চক্র ছিল, এখন অবশ্য তারা পালিয়েছে।জেডএইচ/এসকেডি/এমএস

Advertisement