জাতীয়

ঢাকার বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্তের পর থেকেই চাহিদা বেড়েছে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। সোমবার (৯ মার্চ) ঢাকার তিনটি পাইকারি বাজারে গিয়ে পাওয়া গেল না হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

Advertisement

বিক্রেতারা বলছেন, রোববার রাত ও আজ (সোমবার) ভোরের মধ্যেই সব শেষ। আজ (সোমবার) বিকেল বা মঙ্গলবার সকালের মধ্যে বাজারে স্যানিটাইজার আসতে পারে।

করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে সরকারিভাবে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তারা বাইরে থেকে ফিরে সাবান বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

রোববার (৮ মার্চ) বিকেলে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার সংবাদ শোনার পর থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঢাকার মানুষ।

Advertisement

আজ সকালে পুরান ঢাকার চকবাজারের পাইকারি স্যানিটারি পণ্য বিক্রির মার্কেটে কমপক্ষে ৩০টি দোকানে কারও কাছেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি।

বিক্রেতারা বলছেন, রাতেই সব মাল বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক ফার্মেসি মালিক ফোনে অর্ডার দিয়ে ভোরে মালামাল ডেলিভারি নিয়ে গেছেন।

বাজারে বর্তমানে স্যাভলনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ডেটল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সেপনিল হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সেনিটাইজার রয়েছে। এছাড়া আলমের হ্যান্ড স্যানিটাইজার নামে আমদানিকৃত একটি স্যানিটাইজারও জনপ্রিয়। চকবাজারের পাইকারি বাজারে এদের কোনোটিই পাওয়া যায়নি।

চকবাজারের আল-আমির স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোকানে শুধু লাইফবয় এবং স্যাভলনের হ্যান্ডওয়াশ আছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার আগামীকাল আসতে পারে।’

Advertisement

একই অবস্থা মিটফোর্ডের ফার্মেসিগুলোতে। এখানকার কোনো দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি। হেক্সাসলও পাওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার রাতে দেশের একটি সুপারশপ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে সুপারশপে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচটি স্যানিটাইজার কিনতে পারবেন বলে নির্দেশনা নিয়ে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

পুরান ঢাকার বেচারাম দেউরীর লিরা-নিপা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী শাহ আলম বলেন, ‘আমরাও কারও কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাচ্ছি না। ইনসেপটা গ্রুপ একটা স্যানিটাইজার (স্যানিটাইজা হ্যান্ড রাব) তৈরি করে। ২৫০ এমএল’র প্রতিটি বোতল ১৫০ টাকায় আমরা বিক্রি করতাম। আপাতত তাদের কাছেই মাল আছে। তারা বিকেলে বা রাতে মাল দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।’

বিক্রেতারা জানান, বাজারে সাধারণত দুই ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে। একটি সাধারণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, আরেকটি ইনস্ট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ইনস্ট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কচলানো হলে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। এটা বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয়। বাজারে বিভিন্ন সাইজের স্যানিটাইজারের দাম ৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এ ভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। এর মধ্যে দুজন ইতালিফেরত। এদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এ তিনজন ছাড়া আরও দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সোমবার (৯ মার্চ) বলেছেন, ‘গতকাল (রোববার) বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের নমুনা সংগ্রহ করেছি, তবে তাদের কারোর মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তার মানে এ পর্যন্ত সর্বমোট সর্বমোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিনজনই।’

করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৮২৮ জন। বিশ্বের ১০৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৩৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১১৯ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের।

চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। দেশটিতে একদিনেই ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ জনে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৭৫ জনে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইতালি সরকার। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৬৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৯৪ জন।

এআর/এসআর/পিআর