জাতীয়

করোনা টেস্টের জন্য বিদেশগামীদের ভিড়, সাড়া নেই আইইডিসিআরের

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে কেউ এসেছিলেন ছুটিতে, কেউবা ওয়ার্ক ভিসায় যাবেন কাজ করতে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে তিন জন সংক্রমিত হওয়ার খবরে বিপাকে পড়েছেন তারা। কর্মস্থল থেকে ইমেইলের মাধ্যমে ও ফোন করে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে (আক্রান্ত নয় নিশ্চিত হয়ে) তারপর সেদেশে যেতে।

Advertisement

তাই করোনাভাইরাস সংক্রান্ত পরীক্ষা করাতে সোমবার (৯ মার্চ) সকাল থেকেই বিদেশগামীরা ভিড় করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হবে কি-না, এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না বিদেশগামীরা।

দুপুরে মহাখালীর আইইডিসিআর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উপচেপড়া ভিড়। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে না দেয়ায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আইইডিসিআর কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে অর্ধশতাধিক বিদেশগামী মানুষ। তখনো আইইডিসিআর থেকে কোনো সাড়া পাননি তারা। তাদের পরীক্ষা করা হবে কি-না, না হলে সংশ্লিষ্ট দেশে তারা কীভাবে ফিরবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।

কুমিল্লার লাকসামের বাসিন্দা আমির হোসেন (৪৫) বেশ ক’বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি ছুটিতে দেশে বেড়াতে আসেন। আগামী ১২ মার্চ সৌদিগামী ফ্লাইট তার। কিন্তু হঠাৎই কোম্পানির মালিকের ইমেইল ও কল। জানানো হয়েছে, তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নন, এমন রিপোর্ট নিয়ে সৌদি যেতে হবে তাকে।

Advertisement

আমির হোসেন বলেন, ‘সকালে এসেছি, কিন্তু এখান থেকে কোনো সাড়া নেই। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলতে চাই। কিন্তু শোনার যেন কোনো মানুষ এখানে নেই। আমাদের পরীক্ষা করানো না হলে করণীয় কী, কীভাবে সৌদিতে ফিরবো সে গাইডলাইনও নেই।’

নোয়াখালীর মাইজদীর বাসিন্দা আব্দুর রহিম (৫০) আরও আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমার তো ভাই আজ ফ্লাইট। হঠাৎ দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার খবরে আমাকে সৌদি আরবের মালিক জানিয়েছেন, করোনার পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে যেতে। সন্ধ্যায় ফ্লাইট। সকালেই এখানে এসেছি। এই পরিস্থিতিতে পুরো পরিবার আতঙ্কে-দুশ্চিন্তায়। শঙ্কাবোধ করছি সৌদিতে আদৌ যেতে পারবো কি-না।’

ফেনীর দাগনভুইয়ার সারওয়ার উদ্দিন বলেন, ‘খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ১৪ মার্চ আমার ফ্লাইট। আবুধাবিতে শ্রমিকের কাজ করি। এখন যদি যেতে না পারি পথে বসতে হবে আমাকে। টেস্ট করতেই হবে। রিপোর্ট দিলেই যেতে পারবো। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এখানে কেউ কারও কথা শুনছে না। শুধু অপেক্ষা।’

গাজীপুরের কালীগঞ্জের বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সৌদি যাওয়ার ফ্লাইট ১২ মার্চ। কিন্তু সবার মতো আমারও একই সমস্যা। মালিক বলছেন- টেস্ট করে আসো। কিন্তু এখান থেকে মাত্রই শুনলাম যে বিদেশ থেকে যারা এখন আসছেন, শুধু তাদেরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তাছাড়া দেশের কেউ কিংবা বিদেশগামী কারও পরীক্ষা এখানে করা হবে না।’

Advertisement

আইইডিসিআর মূল ভবনের নিচে গেইটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক কর্মী জানান, ‘দুপুরে করোনা সংক্রান্ত ব্রিফিং শেষ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরও ব্রিফ করবে। তখন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আপাতত বিদেশগামী কারও টেস্ট এখানে নয়। তবে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।’

রোববার (৮ মার্চ) আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ তিনজন ছাড়া আরও দুজনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

সোমবার দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আরও চারজনের পরীক্ষা হয়েছে। তবে পরীক্ষায় কারোর মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি । তার মানে এ পর্যন্ত সর্বমোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিনজনই।

জেইউ/এইচএ/এমকেএইচ