দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আন্তমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলাসদর ও উপজেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক সুবিধাজনক স্থান, যেমন: স্কুল-কলেজ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া এ ভাইরাস সংক্রান্ত সতর্কতামূলক বার্তা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কেবল টিভির মাধ্যমে ও পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Advertisement
হাইকোর্টে উপস্থাপন করা করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের সকল বন্দরে বিদেশ থেকে আগত সকল যাত্রীকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্ক্যানিং করা হচ্ছে। আগত যাত্রীদের শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা আছে কি না তা দেখার জন্য ইনফ্রারেড হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া এয়ারক্রাফটের ভেতরও যাত্রীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
দেশে এখনও পর্যন্ত তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্যও দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
Advertisement
করোনা ভাইরাস নিয়ে হাইকোর্টকে যা জানালো সরকার চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টকে অবহিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই প্রতিবেদনে নতুন করোনা ভাইরাসের ৫টি নতুন লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
এর আগে গত ৫ মার্চ করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশের ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল ইসলাম হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে প্রতিবেদনে নতুন করোনা ভাইরাসের পাঁচটি লক্ষণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহ হলো১. ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ৫ দিন সময় লাগে।২. প্রথম লক্ষণ জ্বর।৩. এরপর শুকনো কাশি।৪. এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।৫. পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন: কিডনি অকার্যকর হতে পারে এবং মুত্যু হতে পারে।
রোগের চিকিৎসা১. যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোনো টিকা/ভ্যাকসিন এখনো নেই।২. চিকিৎসা দিতে হয় লক্ষণ ভিত্তিক।৩. অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং মাস্ক ব্যবহার করুন।
Advertisement
এই রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে ১. ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে)২. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।৩. ইতোমধ্যেই আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।৪. হাঁচি/কাশির সময় বাহু/টিস্যু/কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন।৫. অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন।৬. মাছ-মাংস ভালভাবে রান্না করে খাবেন।৭. জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশসমূহ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে যা করণীয়১. অসুস্থ রোগীদের ঘরে থাকতে বলুন।২. মারাত্মক অসুস্থ রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে বলুন।৩. রোগীকে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।৪. আইইডিসিআর-এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন।
এর আগে গত ৫ মার্চ করোনার বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। পরে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এক. স্থল বন্দর, নৌ বন্দর, বিমান বন্দর, বিশেষ করে বিমান বন্দরে যখন বিদেশীরা বাংলাদেশে আগমন করছেন, তখন অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে তাদের কী ধরণের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কি-না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কি-না তা জানাতে বলেন।
দুই. সারা বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রাক-প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সকল বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা ভাইরাসের জন্য প্রাক-প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) নিতে হবে।
তিন. প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরে যেখানে সনাক্তের জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানের জন্য সরঞ্জামগুলো দেশে পর্যাপ্ত রয়েছে কি-না, যদি না থাকে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এফএইচ/এনএফ/এমকেএইচ