মরিয়ম আক্তার
Advertisement
‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষ্যমতে যেহেতু মানব সভ্যতা বিকাশে নারী-পুরুষের অবদান সমান। তাহলে উভয়ের অধিকার ও সমান। কিন্তু বর্তমান সমাজে নারী অধিকার নিয়ে আমরা কতটা সচেতন? নারীরা এখনো পায়নি তাদের ন্যায্য অধিকার। নারী অধিকার সম্পর্কে কথা উঠলে এখনো অনেকেই জবাব দেয়, নারী আর পুরুষের অধিকার সমান হলে নারীরা কেন পুরুষের মতো ক্ষেত-খামারে কাজ করে না। এমন অনেক যুক্তি দিয়ে থাকেন তারা। আসলে এসব মানুষ জানেও না যে, অধিকার মানে কী! নারী-পুরুষ সমান অধিকার বলতে বোঝায়, যেখানে একই কাজের জন্য উভয়কে সমান পারিশ্রমিক দেওয়া, উভয়ের মত প্রকাশের অধিকার থাকা, উভয়ের সমান শিক্ষাগ্রহণের অধিকার ইত্যাদি।
নারী অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অনেক আন্দোলন, স্লোগান তৈরি করা হয়েছে। যেমন- ১৯৯৮ সালে ‘কাবিন ছাড়া বিয়ে নাই, বিয়ে হলেই কাবিন চাই’। ১৯৯৯ সালে স্লোগান ছিল, ‘নারী নির্যাতন বন্ধ করুন, সুখী সমাজ গড়ে তুলুন’। স্লোগান ছাড়াও ৮ মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব নারী দিবস। এত কিছুর পরও নারী অধিকার শূন্যের কোটায়। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েরা নিজেদের মনের ইচ্ছাটুকু থেকেও বঞ্চিত। শুধু অধিকারই নয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আজ তারা স্বাধীনতাহীন। রাস্তায় ঠিকমত চলাচলেরও স্বাধীনতা নেই গ্রাম্য মেয়েদের।
বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় শত বাধার সম্মুখীন হতে হয় মেয়েদের। কখনো রাস্তার বখাটে ছেলেদের ধর্ষণের শিকার হয়ে অনেককে প্রাণও হারাতে হয়। এ যেন অধিকার বঞ্চিত হওয়ার তুমুল খেলা। গ্রামের একটি মেয়ে ভালো কাজ করলেও যেন সমাজে অনেকের কাছে দুর্নামের পাত্রী হয়ে উঠতে হয়। তাছাড়া সমাজের কাছে একটি মেয়ে যেন পরিবারের বোঝা হিসাবে গণ্য। তাই বোঝামুক্ত হওয়ার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের পিঁড়িতে বসানো হয় সবে কিশোরী ধাপে পা দেওয়া একটি মেয়েকে। যে ছোটবেলা থেকে বড় হতে থাকে কিছু স্বপ্ন নিয়ে, বাল্যবিবাহের কারণে ধুলায় মিশে যায় তার সব সুন্দর স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাগুলো।
Advertisement
নারীরা আজও যতই অধিকার বঞ্চিত হোক না কেন, নারীদের অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নারীদের ছিল ব্যাপক ভূমিকা। প্রায় ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময় অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা। নারীকে এগিয়ে নিতে কাজ করে গেছেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। নিজের জীবনের পুরো সময়কে উৎসর্গ করে গেছেন নারী অধিকারের জন্য। তবে কিছু অপরাজিতা নারী আছেন; যারা তাদের কর্মগুণে পৌঁছে গেছেন দেশের উচ্চ পদে।
কিছু নারী অধিকার বঞ্চিত হয়েও তাদের চেষ্টা, সাধনা আর আত্মবিশ্বাসের জোরে পৌঁছে গেছেন সফলতার চূড়ায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রী আজ নারী। যা আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়। এ থেকেই বোঝা যায় যে, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার সারা জীবনের চেষ্টা বৃথা যায়নি। আমাদের দেশে উচ্চ শিখরে আজ নারীদের স্থান। যা সম্ভব হয়েছে কেবল আত্মবিশ্বাস আর প্রবল প্রচেষ্টায়। যা কি-না আমাদের জন্য আদর্শ। আমরা তাদের অনুসরণ করবো- যারা আজ জীবনে সফল এবং উচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন।
কিন্তু অনুসরণ করে কী হবে? যদি নিজ জায়গায়ই অধিকার বঞ্চিত হই? হ্যাঁ, এবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সমাজের কথায় কান না দিয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। সৃষ্টিকর্তা যেহেতু পৃথিবীতে নারী-পুরুষকে পাঠিয়েছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তাই মানব সভ্যতা বিকাশে উভয়ের অবদান সমান। তাই তো কবি বলেছেন, ‘কোন কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি,/প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী’।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য হলেও নারীদের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে। তবেই আমরা পৌঁছতে পারবো উন্নত দেশগুলোর কাতারে। লেখক: শিক্ষার্থী, কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
Advertisement
এসইউ/এমএস