ফিচার

সংগ্রামী তাহমিনা এখন অনেক নারীর অনুপ্রেরণা

সন্দ্বীপের তাহমিনা আকতার। দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী। মগধরা ইউনিয়নের বাসিন্দা তাহমিনাকে প্রতিদিন প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে যেতে হয়। সন্দ্বীপে লোকাল বাস সার্ভিস নেই। তাই রিকশা বা সিএনজি একমাত্র ভরসা। প্রতিনিয়ত সিএনজি বা রিকশায় যাতায়াত করাও কষ্টদায়ক এবং খরচ বেশি। ফলে যাতায়াতে ভোগান্তি অনেক বেশি। প্রতিদিন কলেজে যাওয়া-আসায় খরচ হয় ৩০০ টাকা।

Advertisement

একদিন তাহমিনা সিদ্ধান্ত নেন, বাইক চালানো শিখবেন। স্বাধীনভাবে নিরাপত্তার সাথে স্কুটি নিয়ে কলেজে যাবেন। গত ২ বছর ধরে স্কুটি চালিয়ে কলেজে যাওয়া-আসা করছেন। কিন্তু প্রতিদিন তাকে শিকার হতে হয়েছে যৌন হয়রানীর। বখাটে যুবকরা তাকে বিভিন্ন ধরনের উপহাস করতো। সবকিছু নিরবে সহ্য করে চলছেন অদম্য তাহমিনা। সব অন্ধকার পেছনে ফেলে দ্বীপের বুকে স্কুটি হাতে কলেজে চলেছেন তাহমিনা। সেটা যেন কেউ মানতে চাচ্ছেন না। চলার পথে বারবার শিকার হতে হয়েছে নানা কটূক্তির। যার শুদ্ধ নাম হয়তো যৌন হয়রানি। তারপরও হাল ছাড়েননি অদম্য মেয়েটি। তাহমিনার স্কুটি চালানো শুরুতে কেউ মেনে নিতে পারেনি। সন্দ্বীপে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে কিছুদিন হলো। কিন্তু মনের ভেতর লালিত কুসংস্কার যেন পিছু ছাড়ছে না। তাই কিছু মানুষ উঠেপড়ে লাগে তাহমিনাকে থামিয়ে দিতে। সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে তাহমিনা আজ অনেক নারীর অনুপ্রেরণা। অনেক নারীও স্বপ্ন দেখেন তাহমিনার মতো আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার। এখন অনেক নারী তার কাছে স্কুটি চালানো শিখছেন। শুধু তা-ই নয়, তাহমিনা এখন দ্বীপের সংগ্রামী মেয়ে হিসেবে উপাধি পেয়েছে সুশীলদের কাছে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় তাহমিনার সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক ছেলেকে দেখি বাইক ব্যবহার করে। তারা ঠিকই তাদের গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছে যেতে পারে। আবার শহুরে মেয়েদেরও দেখতাম স্কুটি চালাচ্ছে। আমি দেখতাম আর ভাবতাম, আমি কেন পারি না? আমাকেও পারতে হবে। এখন আমিও সময়মতো যেতে পারি। প্রথম যেদিন স্কুটার নিয়ে কলেজে যাই, মানুষের বাজে কথাগুলো শুনে মনে হয়েছে আমি আর চালাতে পারবো না।’

প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তাহমিনা বলেন, ‘প্রতিদিন এসব বাজে মন্তব্যে আমি কাঁদিনি, এমন কোনো দিন নেই। বখাটে ছেলেরা প্রায় বলতো অ্যাক্সিডেন্ট করে দেবে। তারা একজন আরেকজনকে দেখিয়ে বলতে থাকে, ‘ওই দ্যাখ, মাইয়া মানুষ গাড়ি চালায়’। আমি তাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করিনি। তাদের বাজে মন্তব্যে আমি থেমে গেলে হেরে যেতাম। আজ অনেক মেয়েকে স্কুটি চালানো শেখাচ্ছি। অনেকে আমার থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। তাই আনন্দটা একটু বেশি। আমার বাবা-মা, কলেজ শিক্ষক ও সতীর্থরা আমাকে খুব সাহস জুগিয়েছেন।’

Advertisement

তাহমিনার বান্ধবী মানসুরা বেগম বলেন, ‘নারীরা এখন বিশ্ব জয় করছে, এভারেস্টের চূড়ায় আরোহন করছে, বিমান চালাচ্ছে। তবুও সামনে থেকে প্রতিবন্ধকতা দূর হচ্ছে না! যেকোনো কাজেই তাদের বাঁধা দিতে যেন প্রস্তুত হয়ে আছে একটি গোষ্ঠী। তাহমিনাকে দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি নিজেও স্কুটি চালানো শিখেছি তাহমিনার কাছে।’

আবুল কাশেম হায়দার মহিলা কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাহমিনার স্কুটি চালানো দেখে আমি আমার স্কুলশিক্ষক বোনকেও স্কুটি কিনে দিয়েছি।’

মুস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ জামিল ফরহাদ বলেন, ‘তাহমিনার মতো সব মেয়ের এভাবে প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হবে। তাহমিনাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।’

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন নেসা চৌধুরী জেসি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সন্দ্বীপের মতো জায়গায় স্কুটার চালিয়ে কলেজে যাওয়া সত্যি নব দিগন্তের সূচনা। এখন দিন পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সন্দ্বীপে নারীদের স্কুটার চালানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’

Advertisement

এসইউ/পিআর