পটুয়াখালী শহরের সদর রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত শাহজাহান মিয়ার স্ত্রী নাহার বেগম (৬৫)। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন। সন্তানদের জন্য কখনও অর্ধাহারে আবার কখনও অনাহারে দিন কাটিয়েছেন। তবে জীবন যুদ্ধে আজ তিনি সফল নারী। জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে বিয়ে হয় নাহার বেগমের। দুই বছর পর ১৯৭১ সালে ঘর আলো করে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এরপর একে একে আসে আরও তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বিয়ের সময় শাহজাহান খুলনায় চাকরি করতেন। প্রথম সন্তান হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে পটুয়াখালীতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসেন। সে সময় ওই দম্পতির নতুন পথচলা শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে হঠাৎ স্বামী শাহজাহান মারা যান। নাহার বেগমের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
Advertisement
তখন একটি টিন সেডের ঘরে ৫ ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। সদর রোডে সড়কের পাশে লাগোয়া ভাড়ার একটি দোকান ছিলো। জীবনে হাজারো কষ্ট এলেও ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা থামাননি নাহার বেগম।
বর্তমানে তার বড় ছেলে নাহিদ ব্যবসা করেন, মেজ ছেলে জাহিদ স্থানীয় সিনিয়র মাদরাসার সহকারী শিক্ষক, সেজ ছেলে জাকির ঢাকায় সিএ পড়ার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, ছোট ছেলে জসিম দুমকীর স্থানীয় মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক আর মেয়ে বিলকিস নাহার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
ছেলে-মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জীবন পরিবর্তন হতে শুরু করে নাহার বেগমের। বর্তমানে সেই টিনের ঘরের জায়গায় নির্মাণ হয়েছে বহুতল ভবন। বেড়েছে আয় ও আয়ের উৎস।
Advertisement
নাহার বেগম বলেন, আমারও সুখের সংসার ছিল, কিন্তু ১৯৮৭ সালে অন্ধকার নেমে আসে। এরপর থেকে আমার পথ চলাটা সহজ ছিল না। আমার প্রতিটি দিন অনেক কঠিন ছিল। স্বামী মারা যাওয়ার সময় তিনটি জমির ফৌজদারি মামলা চলমান রেখে যান। ওই মামলা পরিচালনা অনেক কষ্টকর ছিল। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে ছেলে-মেয়েরা সব সময় আমার কথা শুনতো, যার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করে মানুষ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, একদিকে মামলা, পারিবারিক সমস্যা, পারিপার্শ্বিক সমস্যা, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা অন্যদিকে আমাদের অনেকে সহ্য করতে পারতো না। আমার ছেলে মেয়ের পড়াশোনা মানতে পারতো না। অনেক কষ্ট করে দিন গেছে।
এখন তিনি সুখে আছেন জানিয়ে বলেন, প্রতিনিয়ত নামাজ-রোজা আদায় করি আর মৃত্যুর চিন্তা করি। সব সময় নাতি নাতনির সঙ্গে দুষ্টমিতে সময় কেটে যায়। বর্তমানে সুখে দিন কাটে। আগের মতো চিন্তা ভাবনা করতে হয় না। আগের দুঃখের কথাগুলো আমি অনেকটা ভুলেই গিয়েছি।
এফএ/পিআর
Advertisement