দেশজুড়ে

ফাতেমার কারখানায় এখন কাজ করেন ১২০ জন

‘অভাবের সংসার ছিল আমাদের। স্বামী মাছের ব্যবসা করতেন। কোনো রকমে দিন পার হতো। তবে এখন আর অভাব নেই। আমি নিজেই ১২০ জন অভাবি মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছি। চেষ্টা আর পরিশ্রম করলে ভাগ্যটাকে পরিবর্তন করা সম্ভব।’ এভাবেই জাগো নিউজের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছিলেন সাতক্ষীরা শহরের থানাঘাটা এলাকার ফাতেমা বেগম।

Advertisement

স্বামী আবু সাইদকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন এই নারী। তবে হস্তশিল্পের মাধ্যমে নিজেকে নতুনরূপে মেলে ধরেছেন সমাজে। এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী। ৮০ জন পরুষ ও ৪০ জন নারী কাজ করেন তার হ্যান্ডিক্রাফট ফ্যাক্টরিতে। কুড়েঘর থেকে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়িও।

সফল এই নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার হাতের কাজের প্রতি ঝোঁক ছিল। ১৯৯২ সালে বাড়িতে স্বল্প পরিসরে মাত্র চার হাজার টাকা দিয়ে হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ শুরু করি। বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা পুঁজি রয়েছে আমার। হ্যান্ডিক্রাফটের ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছি জমি ক্রয় করে। সেখানেই শ্রমিকরা কাজ করেন।

তিনি বলেন, গ্রামের অসহায় নারী ও পুরুষদের প্রথমদিকে হাতেকলমে শিখিয়ে এখন স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছি। তারা নিজেরাই এখন প্রতি মাসে অনেক টাকা রোজগার করেন। পুরুষরা আমার এখান থেকে প্রতিমাসে ২০-২৫ হাজার টাকা বেতন পান আর নারীরা পান ৮-১০ হাজার টাকা। নারীরা একটু কম পাওয়ার কারণ হচ্ছে, বাড়ির কাজ শেষ করে তারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ফলে তাদের প্রডাকশন কম হয়। প্রডাকশন হারে বেতন পান শ্রমিকরা।

Advertisement

দুঃসময়ের কথা মনে করে ফাতেমা বেগম বলেন, ২০১২ সালে স্বামী মারা গেলেন। ছেলে সাকিব হাসান টুটুল ও মেয়ে ফারহানা ফেরদৌস নেহাকে নিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। সেসময়ে কোনো নিকট জনদের সহযোগিতা আমি পাইনি। তবে আমার ব্যবসাটি আগে ছোট পরিসরে থাকলেও স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় পরিসরে শুরু করি। তারপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিনি জানান, বর্তমানে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার পরও প্রতিমাসে ৪৫-৫০ হাজার টাকা ব্যবসায় লাভ হয়। ঢাকা থেকে কাপড় ক্রয় করে আমার ফ্যাক্টরিতে হ্যান্ডিক্রাফট (হাতের কাজ) করার পর থ্রি পিস, গাউন, সারারা, পাজ্ঞাবি, শাড়ি তৈরি করি। সেগুলো ঢাকার বসুন্ধরা, গাউসিয়া, ধানমন্ডি এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যায়।

এখন সুখে আছেন জানিয়ে ফাতেমা বেগম বলেন, ছেলেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি। মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। বাড়ি তৈরি করেছি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ধরে রাখা ছাড়া আমার নতুন কিছু চাওয়ার নেই।

সমাজে অবহেলিত ও অলস সময় পার করা নারীদের উদ্দেশে ফাতেমা বেগম বলেন, আমার মতো নারীরা বাড়িতে বসে না থেকে সবাই কাজে এগিয়ে আসুন। অভাবের কারণে অনেক সময় নারীদের নির্যাতিত হতে হয়। অলস সময় পার না করে উদ্যোগী হয়ে যেকোনো কাজ শুরু করুন, পরিশ্রম করুন সফলতা আসবেই। হাতের কাজ করে প্রতি মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা রোজগার করা খুব সহজ। আমার এখান থেকে কাজ শিখে এখন অনেকেই বাড়িতে বসে কাজ করে মাসে এমন টাকা আয় করছেন।

Advertisement

ফাতেমা বেগমের ছেলে মাস্টার্স শিক্ষার্থী সাকিব হাসান টুটুল বলেন, আগে আমাদের অভাব ছিল। এখন দাঁড়িয়ে গেছে। আমার আম্মুর কারণে। গ্রামে মহিলাদেরও অনেক আয়ের সুযোগ হচ্ছে। তারা আয় করছেন, কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।

ফাতেমা বেগমের হ্যান্ডিক্রাফট ফ্যাক্টরিতে ৭ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন আনজুয়ারা বেগম। তিনি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশোলিয়া গ্রামের সোহরাব আলী সরদারের স্ত্রী।

আনজুয়ারা জানান, এখান থেকেই হাতের কাজ শিখেছি। বর্তমানে কাজ করে প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার টাকা রোজগার হয়। যা আমাদের সংসারে ব্যয় করি।

ফাতেমা বেগমকে একজন পরিশ্রমী ও সফল নারী হিসেবে উল্লেখ করে সাতক্ষীরা চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, এক সময় কিছুই ছিল না তাদের। এখন পরিশ্রম করে সফল হয়েছেন। ১২০ জন নারী-পুরুষকে স্বাবলম্বী করেছেন। যেটি অন্য যেকোনো উদ্যোগী নারীদের জন্য অনুকরণীয়।

এফএ/পিআর