ফিচার

হাত ধোয়া এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন?

‘হাত ধোয়া’ কথাটি শুনতে বা বলতে সহজ মনে হলেও সহজ বিষয়টিই দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাত ধুয়ে হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস সবারই থাকা দরকার। কারণ সুস্থতার জন্য হাতধোয়া খুবই জরুরি। নানাবিধ কারণে হাত নোংরা হয়ে প্রতিদিন হাজারো জীবাণু দেহে সংক্রমিত হয়। তাই দিনে কমপক্ষে ৫ বার সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া দরকার। তদুপরি হাত ধুয়ে হাত মোছার তোয়ালেটাও পরিষ্কার থাকা চাই।

Advertisement

কেন হাত ধোবেন: কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস ভ্যাকসিনের চেয়েও কার্যকরী হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার বিষয়টি আরও জরুরি। কারণ শিশুদের হাতে ময়লা বেশি থাকে এবং নিজের অজান্তেই মুখে হাত দেয়। তাই শিশুরা হাত না ধুয়ে খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, কৃমি, পানি ও খাবার বাহিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি খাবার ভালোভাবে রান্না করলেও হাতে ময়লা নিয়ে খাবার খেলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ঠান্ডা লাগলে বা ফ্লুর মৌসুমে হাত বারবার ধুলে ফ্লু বা সর্দি লাগা অথবা ছড়ানো দুটিই ঠেকানো যায়।

কখন হাত ধোয়া উচিত: যেসব কাজের পর আমাদের হাত ধোয়া জরুরি হয়ে পড়ে- ১. খাবার প্রস্তুতি ও পরিবেশনের আগে ও পরে ২. প্রতিবার খাওয়ার আগে ও পরে৩. পায়খানা-প্রস্রাবের পর৪. নাক ঝাড়া, কফ ফেলা বা হাঁচি-কাশি দেওয়ার পর৫. অসুস্থ কারো সেবা-শুশ্রূষা করার আগে ও পরে৬. দেহের কোনো ক্ষত বা কাঁটা-ছেড়ার চিকিৎসা করার আগে ও পরে৭. শিশুর পায়খানা পরিষ্কার বা ডায়াপার বদলানোর পর৮. কোনো পশু-পাখি অথবা এদের খাবার বা বিষ্ঠা ধরার পর৯. মুরগি বা গৃহপালিত পাখির মাংস, কাঁচা ডিম ও সী-ফুড ধরার পর১০. আবর্জনা ধরার পর সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

কী দিয়ে ধোবেন: সাবান সহজলভ্য বিধায় মাটি বা ছাই ব্যবহার না করে অবশ্যই সাবান ও পরিষ্কার পানি ব্যবহার করা উচিত।

Advertisement

না ধুলে কী হতে পারে: রোগ প্রতিরোধে হাত ধোয়ার ভূমিকা এখন শুধু হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ নয় বরং রেস্তোরাঁ, স্কুল, কলেজ সর্বত্রই স্বীকৃত। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় নাকে-মুখে হাত দিলে বা হাত ভালোভাবে না ধুয়ে খাবার খেলে বিভিন্ন রকমের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। ফলে সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু থেকে শুরু করে ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকে হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় অপরিষ্কার জামা বা রুমাল ব্যবহার করেন। হাত না ধুলে এসবের মাধ্যমে এমনকি করমর্দনের মাধ্যমেও রোগ ছড়াতে পারে।

হাত ধোয়ার নিয়ম: শুধু পানি দিয়ে হাত ধুলে বাহ্যিকভাবে পরিষ্কার হলেও হাত জীবাণুমুক্ত হয় না। জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হলো সাবান, লিকুইড সোপ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড-রাব। হাসপাতাল ছাড়া সাধারণ গৃহস্থালি, অফিস-আদালতে হাত জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য সাবান বা লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুলেই চলে। প্রতিবার হাত ধোয়ার সময় প্রায় ৩ মিলিলিটার করে লিকুইড সোপ নেওয়া উচিত। হাত খুব বেশি ময়লা হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের হাত থেকে সব জীবাণু এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে পারে না।

প্রথমে পরিষ্কার পানিতে হাত ভিজিয়ে হাতে সাবান নিতে হবে। সাবান দুই হাতে লাগিয়ে কয়েক সেকেন্ড সময় ধরে আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে, নখে, হাতের সামনে-পেছনে ও কবজিতে ভালো করে ঘষে নিয়ে ফেনা তৈরি করতে হবে। অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ডলে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পরিষ্কার উষ্ণ পানির ধারায় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সবশেষে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে হবে অথবা বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। পানির কল বন্ধ করার সময় কাগজের টাওয়েল দিয়ে ধরে বন্ধ করা ভালো।

হাত ধোয়া দিবস: বিশ্বজুড়ে সব বয়সী মানুষের মধ্যে প্রতিদিন সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার এ অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে শিশুমৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম