সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করে পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটানোর দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনে মানুষের অবাধে যাতায়াত, চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম, বনের নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও অপরিকল্পতিভাবে সম্পদ আহরণের ফলে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের এখন করুণ অবস্থা। দিনকে দিন বনের উপর মানুষের নির্ভরশীলতার প্রভাবে সুন্দরবনের অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন তার জীববৈচিত্র হারিয়ে শুন্যজলা ভূমিতে পরিণত হবে মনে করছেন সুন্দরবন বিশেষজ্ঞরা।এ অবস্থায় সরকারের নির্দেশে গত ১৮ আগস্ট খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সালামের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় এক বছরের জন্য সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি উত্থাপিত হয়। নানা শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় অন্তত এক বছরের জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব করেন। প্রস্তাব করে বনের উপর নির্ভরশীল উপকূলের ৩৫ লক্ষ জেলো বাওয়ালীদের বিকল্প কর্মসংস্থানেরও।তাদের মতে, সুন্দরবনের সকল ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করে সুন্দরবন উপকূলীয় বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বনের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আর সুন্দরবনের বনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করে সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, চাঁদপাই, দুবলারচর, হিরন পয়েন্টসহ যে সকল পর্যটনস্পট রয়েছে তার অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটিয়ে পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধি করা গেলে কয়েক গুণ রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. শেখ ফরিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধিসহ সকল ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন করে সকল ধরনের সযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করে সুন্দরবনের উপর নির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে তড়িৎ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সুন্দরবনের উপর যে অত্যাচার শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকরে বাংলাদেশের গর্ব প্রাকৃতিক এ বিশ্ব সম্পদ হারিয়ে শুন্য একদিন সুন্দরবন জলাভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ট্যুরিস্টদের সব সময় অকর্ষণ করে। এ কারণে সুন্দরবন দেখতে বিদেশি পর্যটকরা বারবার ছুটে আসেন। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরস্টে এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয়বার রূপ বদলায়। সরকারী ভাবে সুন্দরবনের পর্যটনস্পট গুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নের বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবনের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করার জন্য বন বিভাগ সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বন বিভাগ দ্রুত সন্দরবনের করম জলের মতো আরো একটিইকো ট্যুরিজম স্পট তৈরি করতে যাচ্ছে বনের আন্দারমানিক এলাকায়। এভাবে সুন্দরবনকে আকর্ষনীয় করতে ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগ সব সময় সতর্ক রয়েছে। শওকত আলী বাবু/এমজেড
Advertisement