প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানে একদিনে আরও ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে দেশটিতে করোনায় প্রাণ গেল মোট ১২৪ জনের। করোনায় নিহতদের ছয়জনই দেশটির রাজনীতিক অথবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। শুক্রবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
Advertisement
এতে বলা হয়েছে, নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত অন্তত ১৭ জন শুক্রবার মারা গেছেন। তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপোর বলেছেন, আমরা নতুন করে এক হাজার ২৩৪ জনের করোনা সংক্রমিত নিশ্চিত হয়েছি; যা গত কয়েকদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। নতুন সংক্রমিতদের নিয়ে দেশটিতে করোনায় শনাক্ত হলেন মোট ৪ হাজার ৭৪৭ জন।
তিনি বলেন, নতুন করে যারা করোনায় শনাক্ত হয়েছেন; তাদের অনেকের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে দুই সপ্তাহ আগে। এখন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ বলছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের উপদেষ্টা ও প্রবীণ বিপ্লবী কূটনীতিক হোসেইন শেইখুল ইসলাম করোনা সংক্রমিত হয়ে বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। নভেল করোনাভাইরাসে ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার প্রাণহানি ঘটেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা পরিষদ এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ মীর মোহাম্মদি গত সোমবার মারা গেছেন।
Advertisement
এছাড়া করোনার ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত দেশটির জিলান অঞ্চলের এমপি মোহাম্মদ আলী রমজানি দস্তক গত শুক্রবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরানিয়ান স্টুডেন্ট নিউজ অ্যাজেন্সির (আইএসএনএ) বলছে, তেহরানের অপর এমপি ফাতেমাহ রাহবার করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ইরানি এই এমপি বর্তমানে কোমায় রয়েছেন।
করোনায় বিপর্যস্ত ইরান ইতোমধ্যে এই ভাইরাসের প্রকোপ সামলাতে দেশটির স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশটির বড় বড় সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান। দেশটির ৩১ প্রদেশের সবগুলোতেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ যদি বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে পৌঁছায় তাহলে বিশ্বজুড়ে প্রাণহানির সংখ্যা ৬ কোটি ৮০ লাখে ঠেকতে পারে বলে অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক সতর্ক করে দিয়েছেন। এর মধ্যে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে। ভয়াবহ সেই মহামারি বিশ্বের কোনও কোনও দেশের অর্থনীতির সংকোচন ঘটাতে পারে ৮ শতাংশের মতো; যা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে প্রবল ধাক্কা তৈরি করবে।
Advertisement
এমনকি স্বল্প সময়ের জন্য এই মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও তা বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে গবেষণার সঙ্গে জড়িত দুই গবেষক সতর্ক করে দিয়েছেন। তবে নিম্নমাত্রার প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রেও চীনে প্রায় দুই শতাংশ মানুষ মারা যাবে।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। দুই মাস পর চীনে সংক্রমণ এবং প্রাণহানি কমে এলেও গত কয়েকদিনে বিশ্বজুড়ে তা বেড়েছে। বর্তমানে করোনায় চীনের বাইরে মৃত্যুর হার প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
গবেষকদের ধারণা, নিম্নমাত্রার মহামারি হলেও প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রথম বছরে বিশ্বজুড়ে দেড় কোটি মানুষের প্রাণ কাড়বে করোনা। অস্ট্রেলীয় এই গবেষকদের দাবি, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র চীন এবং ভারতে কয়েক মিলিয়ন করে মানুষ মারা যাবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ হারাতে পারে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের বিস্তারের ঘটনায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে মহামারির শঙ্কা প্রকাশ করেছে। চীনে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ৪২ জন, সংক্রমিত হয়েছেন ৮০ হাজার ৫৫২ জন। চীনের বাইরে মারা গেছেন ৩৪২ জন এবং সংক্রমিত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৮১ জন।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ইতালিতে। দেশটিতে করোনা সংক্রমিত হয়ে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৫৮ জন। চীনা একদল বিজ্ঞানী আগামী এপ্রিল মাসেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে বলে প্রত্যাশা করেছেন।
সূত্র : এএফপি, ডেইলি মেইল।
এসআইএস/জেআইএম