ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার লক্ষণদিয়া গ্রামের একটি বাড়ির প্রাচীর নানা জাতের গাছ দিয়ে মোড়ানো। ছাদেও রয়েছে বড়বড় আম-কাঁঠালের গাছ। সামনের বিশাল আঙিনা ও রাস্তার ধার দিয়ে লাগানো হয়েছে বনজ গাছ। বাড়ির সেপটিক ট্যাংকটিও গাছ দিয়ে সাজানো। কেটে-ছেটে নান্দনিক করে তোলা হয়েছে। যা সবার নজর কেড়েছে। স্থানীয়রা বাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘গাছবাড়ি’। শখের বসে ওই গ্রামের মৃত গোলাম কওছার আলীর ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম বাড়িটি তৈরি করেছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের শৈলকুপার চাঁদপুর নামক স্থান থেকে আনুমানিক ৪ কিলোমিটার পূর্বে গেলেই পড়বে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লক্ষণদিয়া গ্রামটি। যে গ্রামের দক্ষিণপ্রান্তের প্রথম বাড়িটি হচ্ছে ‘গাছবাড়ি’। এ বিষয়ে কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখালেন আর জানালেন বাড়িটির কথা।
Advertisement
জানান, তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। গ্রামের নারীদের দিয়ে কাপড়ে নকশা তোলা কাজ করান। প্রথমে নিজ গ্রামের নারীদের দিয়ে কাজটি করালেও বর্তমানে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই কাজ ভালোভাবে করতে ২০১৪ সালে গ্রামের বাড়িতে একটি ভবন নির্মাণ করেন। কিন্তু গ্রামের নারীরা সেই ভবনে বসতে চান না, তারা নিজেদের বাড়িতে কাজ নিয়ে যান আবার কাজ শেষে তৈরি পণ্যটা দিয়ে যান। এতে তার নির্মাণ করা বাড়িটি অনেকটা অকেজো হয়ে যায়।
তিনি জানান, আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই বাড়িটিতে গাছের সংগ্রহশালা তৈরি করবেন। গাছের সংগ্রহশালা করতে বাবার দেওয়া জমির সঙ্গে তিনিও কিছু জমি কিনেছেন। এভাবে ১৪ বিঘা জমির উপর এই গাছের সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন। দেশ-বিদেশ থেকে গাছ পছন্দ করে নিয়ে আসেন। এরপর এই সংগ্রহশালাটি বড় করে তোলেন। বেলজিয়াম, পর্তুগাল, মালয়েশিয়া, ভারত, দুবাইসহ একাধিক দেশ থেকে গাছ নিয়ে এসেছেন। সংগ্রহশালায় নানা প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতি মাসেই গাছের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি ঢাকা থেকে প্রায়ই বাড়ি আসেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন পছন্দের গাছ। গাছ বাড়িতে রিটা, নাগলিংগম, এ্যামাজিন, লিলির মতো মূল্যবান গাছ রয়েছে। যেটি জঙ্গলে হয়ে থাকে, সেটা তিনি এই বাড়িতে লাগিয়ে সুন্দর করে রেখেছেন। এ ছাড়া বাড়িটির ওয়াল ‘ওয়াল কার্পেট’ নামের গাছ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। গোটা বাড়ির চারপাশে ৫ শত চারা রোপণ করেন। যা পরবর্তীতে গোটা ওয়াল ঘিরে রেখেছে।
আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি সেফটিক ট্যাংকটাও গাছ দিয়ে সাজিয়েছেন। সেখানে বসে মানুষ ফুলের ঘ্রাণ উপভোগ করেন, কিন্তু বুঝতে পারেন না নিচেই রয়েছে ময়লা। তিনি এই সংগ্রহশালায় হারিয়ে যাওয়া সব গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক গাছ তিনি লাগিয়েছেন। সবকিছুর সংগ্রহশালা থাকলে গাছের থাকবে না কেন, এই চিন্তা থেকে এমন সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন।
Advertisement
আমিনুল ইসলামের স্ত্রী সিন্ধা ইসলাম। ছেলে মায়জাবিন আমিন, মেয়ে আনুশকা বিনতে আমিনকে নিয়ে তার সংসার। ব্যবসার প্রয়োজনে ঢাকায় থাকেন। তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও মাঝে মধ্যে সময় পেলেই গাছ বাড়িতে আসেন। বাকি সময়টা বাড়িটি তালাবদ্ধ থাকে।
আমিনুল ইসলাম জানান, গাছের পরিচর্যা করার জন্য নিয়মিত তিনজন কৃষি শ্রমিক আছেন। বেশির ভাগ সময় তিনি নিজের হাতেই পরিচর্যা করেন। ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি তার একটা আগ্রহ ছিল। এরপর কর্মজীবনে যাওয়ার পর নানাভাবে গাছ সংগ্রহ। ঢাকার বাসায়ও ছাদ বাগান রয়েছে।
গাছের সংগ্রহশালায় এখন পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে সে বিষয়ে তার কোনো হিসেব নেই বলে জানান। তবে জীবনে যা আয় করছেন তার একটা বড় অংশই গাছের পেছনে ব্যয় করেন।
কৃষি শ্রমিক জিন্না আলম জানান, গাছগুলো স্যারের জীবন। তিনি এগুলো সন্তানের মতো ভালোবাসে। এই গাছের মধ্যে থেকে তারাও এগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছেন। দশর্ণাথী আসলে স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রধান ফটক খুলে দেয়া হয়। তারা এসে ঘুরে ঘুরে দেখেন। ছবি তোলেন। তবে মূল ভবনটি বন্ধ থাকে। এখান থেকে কোনো কিছু বিক্রি হয় না বলে তিনি জানান।
Advertisement
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমআরএম/এমএস