বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। এর থাবা পড়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে প্রায় তিন হাজার মানুষের প্রাণ কাড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ মঙ্গলবারের ওই বক্তব্যের মাত্র একদিন পরই জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছর হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব হোলি মিলনে অংশ নিচ্ছেন না তিনি।
Advertisement
বুধবার এক টুইটবার্তায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা ভিড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই আমিও এ বছর হোলি মিলন অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এর একদিন আগেই তিনি ভারতবাসীকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যথেষ্ট সতর্কতা নেয়া হয়েছে। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ তবে বুধবার ভাইরাস আতঙ্কের কারণে নিজেই হোলির অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিলেন এ বিজেপি নেতা।
শুধু নরেন্দ্র মোদিই নন, তার মতো দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এবারের হোলি উৎসবে যোগ দিচ্ছেন না। একই পথে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও।
Advertisement
ভারতে মাত্র একদিনের ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই ইতালীয় নাগরিক, বাকিরা ভারতীয়। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।
তিনি জানান, গত মাসে ইতালি থেকে একদল পর্যটক ভারত সফরে যায়। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। তার স্ত্রীর রিপোর্টও পজেটিভ এসেছিল। পরে সেগুলো আবার যাচাইয়ের জন্য পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে নমুনা পাঠানো হয়। বুধবার নিশ্চিত হয়, তিনিও করোনায় আক্রান্ত।
ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় ইতালির ওই পর্যটক দলের ২১ জনকে দিল্লির চাওলায় ইন্দো-তিব্বতিয়ান বর্ডার পুলিশের কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্পে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ১৪ জনের নমুনার রিপোর্টে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি, তাদের সঙ্গ দেয়া ভারতীয় বাসচালকেরও শরীরেও করোনা ধরা পড়েছে। আরও দুই ভারতীয় (বাসের হেল্পার ও গাইড) কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
এর আগে দিল্লির যে ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, আগ্রায় তার ছয় আত্মীয়ের রিপোর্টও পজেটিভ এসেছে। এছাড়া কেরালায় তিনজন ও হায়দরাবাদে একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন।
Advertisement
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরই মধ্যে অন্তত ৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু চীনে। দেশটির মূল ভূখণ্ডে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৯৮১ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৮০ হাজার ২৭০ জন।
চীনের বাইরে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে অন্তত ৫ হাজার ৩২৮ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস পাওয়া গেছে, মারা গেছেন ৩২ জন। চীনের পর সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ইতালিতে। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় ৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আক্রান্ত ২ হাজার ২৬৩ জন।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ হাজার ৭৯৬ জন, আর মারা গেছেন অন্তত ৩ হাজার ২০১ জন।
কেএএ/এমএস