মতামত

কাউন্ট ডাউন মুজিববর্ষ : বঙ্গবন্ধুর আদর্শ

মুজিববর্ষের কাউন্ড ডাউন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যতই কাছে আসছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির জন্মের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ততই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে কথাবার্তা সামনে আসছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথাটা নানা সময় সামনে আনছেন। গত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে নতুন কমিটির সদস্যদের নিয়ে তিনি টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলেন। সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা।

Advertisement

বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যুর স্মৃতিবিজড়িত স্থানে অনুষ্ঠিত সভাটি সংক্ষিপ্ত হলেও মূলত দুই কারণে তাৎপর্যের দিক থেকে ছিল বিশাল। প্রথমত ক্যাসিনোসহ অন্ধকার জগতের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কার্যকর ও চলমান থাকার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সম্মেলনের পর এবং দ্বিতীয়ত মুজিববর্ষ পালনের প্রস্তুতি সামনে রেখে দেশ ও জনগণের উন্নতি-অগ্রগতির শপথ নিতে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভায় তিনি মুজিববর্ষের উৎসব সফল করতে নতুন কমিটিসহ দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণকে আহ্বান জানান। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে চলতে হবে।’

ইতোমধ্যে বৃহত্তর পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর ও বগুড়ার মহাস্থানগড় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে গিয়েছিলাম গোকুল মেধ, যেখানে রয়েছে ‘বেহুলার বাসরঘর’ বা ‘লক্ষ্মীন্দরের মেধ’ নামের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি। ইস্টক নির্মিত এই স্তূপটি বেশ উঁচু। খাড়া, উঁচু-নিচু, এবড়ো-থেবড়ো পার বেয়ে উপরে উঠতে খুব কষ্ট হয়, তাই বয়সের কারণে সঙ্গীদের কেউ উপরে উঠল না। কিন্তু আমি নাছোরবান্দা। এক ছাত্রের হাত ধরে উপরে গিয়ে উঠলাম। গিয়ে দেখি ১২/১৫ জনের একটি ছাত্র গ্রুপ সেখানে। এটা ওটা দেখছে এবং বাসরঘর কোথায় তা খুঁজছে। বেহুলা সম্পর্কে যেমন ওরা জানে না, তেমনি জানে না ওই স্তূপ সম্পর্কে। এটি শিব মন্দির, নাকি বৌদ্ধ মঠ, নাকি বাইরের শত্রুদের থেকে রাজধানী পুন্ড্রবর্ধন (বর্তমান মহাস্থানগড়) রক্ষা করার জন্য নির্মিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, তা নিয়ে এখনো ভিন্ন মতামত রয়েছে শুনে ওরা বিস্মিত হয়ে আমার চারপাশে জমায়েত হলো। কথায় কথায় আমি কি করি তা যেমন ওরা জানলো, তেমনি ওদেরও খোঁজখবর নিলাম। ওরা এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, ছাত্রলীগ সংগঠনের সঙ্গে কম-বেশি যুক্ত।

আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি বিধায় ওরাও আমার কাছে দল সম্পর্কে জানতে চাইল। আমি কথায় কথায় মুজিববর্ষ পালনের কথা বললাম। কলেজে পালিত হবে তেমনটা ওরা বলল। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কথা উঠল। আমি ওদের কাছ থেকে এ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। ওরা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। বগুড়া জেলা তাই বিএনপির জোর বেশি সেখানে। ওরা খালেদা জিয়া জেলে, তারেক জিয়া বিদেশে এবং বিএনপি এখন কোণঠাসা প্রভৃতি সব বুঝতে এবং সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলতেই তাদের ইন্টারেস্ট। মনে হলো রাজনীতি বলতে ওরা সেটাই বুঝে। আমাদের সময়ে কলেজের ছেলেরা রাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাধারণভাবে আরো সচেতন ছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে কথা তেমন জমলো না। আমিও দেখলাম, স্বল্পকথায় তা বুঝানো বেশ কষ্টকর।

Advertisement

ওদের ছেড়ে ইটের সুউচ্চ স্তূপের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমার মনে হলো, অতীতে রাজার সৈন্যরা যেমন জানতো না কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে হচ্ছে; ঠিক তেমনি একালের রাজনৈতিক কর্মীরাও দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। যদি এরকমটা হয়, তবে দল করে যখন সংগঠিত শক্তি দাঁড়ায়, তখন ওই শক্তি ক্ষমতার জোরে দখল-দাপট, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে যাবে না কেন? ওদের একটা অংশ ওপরের অদৃশ্য-অবৈধ-অন্ধকার জগতের সঙ্গে চেইনে যুক্ত হবে না কেন? বলার অপেক্ষা রাখে না, ওপরের অন্ধকারের শক্তি লোকচক্ষুর আড়ালে সমাজ ও রাষ্ট্রের চরম ক্ষতি করে, কিন্তু লক্ষ্য-উদ্দেশ্য না জানা ক্ষমতা-সংশ্লিষ্ট তৃণমূলের সংগঠিত শক্তি সরাসরি জনজীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অবৈধপথে গেলে সবসময়েই তা হয় জনগণের জীবন-জীবিকার জন্য ভয়ঙ্কর।

স্তূপ থেকে নামার সময় পড়ে যাওয়ার ভয় ছাড়া আর কোনো কিছুই মাথায় ছিল না। কিন্তু নিচে নেমে আসার পর বেশ কিছু সময় মনটা বিষণ্নতায় ভরে রইল। বিষণ্নতার কারণ দুটো। প্রথমত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বলতেই ’৭২-এর সংবিধানে উল্লিখিত জাতীয় চার মূলনীতির বিষয়টি প্রধান হয়ে দাঁড়াবে। আমিও তাদের জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে বলেছিলাম। কিন্তু আমি স্থির নিশ্চিত, এ সম্পর্কে আমি ওদের বুঝাতে সক্ষম হইনি। যতটুকু বলেছি, তা ওদের মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে। না পেরেছি বুঝাতে আর না পেরেছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা সৃষ্টি করতে। দ্বিতীয়ত বিদ্যমান বাস্তবতা বিচারে ওই চারনীতি এখন কি অবস্থায় রয়েছে, তা মনের কোণে জমা হয়ে আমার চিন্তা-চেতনার ভিত্তিমূলকে নড়বড়ে করে দিচ্ছিল। এই অবস্থায় বিষণ্নতা পেয়ে বসাটা অস্বাভাবিক ছিল না।

এটা তো ঠিক যে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা জাতীয় চারনীতির বিষয়টির অর্থ ব্যাপক ও বহুমুখী। একবারে বই পড়ে তিনি ওই আদর্শ আত্মস্থ করেননি। সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পোড় খেয়ে তা গ্রহণ করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে তিনি পূর্ব পরিচিত থাকার সুবাদে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করেন এবং বাড়ি ফিরে আসার পর সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেন। গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগ গঠিত হয় মূলত তাঁর উদ্যোগে। সেই সময় থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়কাল অর্থাৎ ৩৬ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। এই দিনগুলোতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় লড়াই-সংগ্রাম, জেল-জুলুম, গণসংযোগ-সম্পৃক্তি, পড়া-জানা প্রভৃতির ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিকশিত হয়ে চূড়ান্তে পৌঁছে। জাতির একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের জাতীয় ও বিশ্ব বাস্তবতার সর্বোচ্চ আদর্শ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তিনি গ্রহণ করেছিলেন। সমাজতন্ত্র-ধনতন্ত্র ঠাণ্ডা যুদ্ধযুগের অন্যান্য দেশের জাতীয় ও জননন্দিত নেতাদের সঙ্গে তাই তিনি চিরঞ্জীব থাকবেন। যত দিন যাবে ততই তাঁর আদর্শের বহ্নিশিখা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হতে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হলে জাতীয় চার নীতির বহুবিস্তৃত ও বহুমুখী দিক যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি এই চার নীতির আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে। তিনি কখনো এই চার নীতিকে বিচ্ছিন্ন বা শর্তমুক্ত করেননি। এই চারটি পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং একটাকে অপরটা থেকে পৃথক করার কোনো উপায় নেই। গণতন্ত্রের পথে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ঘটিয়ে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর আদর্শের মহান বহিঃপ্রকাশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত নবজাত দেশে যখন তিনি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, তখন যেমন ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠীগুলোকে বেআইনি করে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের পথ রচনা করতে প্রয়াসী হন। তেমনি যখন তিনি ‘চাটার দল’-এর দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও ‘রাতের বাহিনী’-এর হত্যা-সন্ত্রাস ঠেকাতে সমাজতন্ত্র সামনে রেখে একদল বাকশাল করেন, তখনো ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন এবং সর্বোপরি গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতি বহাল রাখেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে কোনো সময় একদলীয় ব্যবস্থা রহিত করতে পারবেন।’ ‘আবার সব ঠিক হয়ে যাবে’ কথাটা এখনো কানে বাজে।

Advertisement

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিবেচনায় নিতে হলে আরো একটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক সময়েই আলোচনায় রাজনীতির কৌশলের সঙ্গে আদর্শকে মিলিয়ে ফেলা হয়। তাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভুল বুঝা বা বিকৃত ও অবমূল্যায়ন করার ক্ষেত্র তৈরি হয়। প্রসঙ্গত, আদর্শ ব্যক্তি জীবনে পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিকশিত হয়। কিন্তু এর মর্মবাণী চিরায়ত। আর রাজনীতির কৌশল ভুল হলে যদি সংশোধনের সুযোগ না থাকে বা সংশোধন করে যদি অগ্রসর না হওয়া যায়, তবে নেতা গণবিচ্ছিন্ন ও পতিত হতে বাধ্য। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বঙ্গবন্ধু ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক নীতি-কৌশল গ্রহণে কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি। ‘যদি ভুল হয়, সংশোধন করে নেই’ কথাটি তিনি তাই বিভিন্ন সময়ে বলেছিলেন। এমনটা তিনি করতে পারতেন বুঝেই দেশি-বিদেশি পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে গভীর রাতে হত্যার পথ বেছে নেয়।

বঙ্গবন্ধুর মনোজগতে তাঁর আদর্শ গভীরভাবে প্রোথিত হতে পেরেছিল, কেননা তিনি জনগণের কাছ থেকে নিজেকে কখনো পৃথক করেননি। মানুষকে জানা-বুঝা ও তাদের জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নেয়ার সহজাত বৈশিষ্ট্যে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। এক কথায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার মানুষ ছিল তাঁর কাছে ধ্রুবতারাসম। তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দ্বিজাতিতত্ত্বের নীতিতে পাকিস্তান চলুক তা একেবারেই চাননি। অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে তিনি তখন গ্রহণ করেন। এই ধারা আগেও মুসলিম লীগের মধ্যে বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত হয়, তখন মুসলিম শব্দটি রাখা হবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক হয় এবং কেউ কেউ এই ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে ওই সংগঠনে যোগ দেয় না। ওই সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইতে তিনি লিখেছেন, ‘এখনো সময় আসেনি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দেশের আবহাওয়া চিন্তা করতে হবে। নামে কিছু আসে যায় না। আদর্শ যদি ঠিক থাকে, তবে নাম পরিবর্তন করতে বেশি সময় লাগবে না। কয়েক মাস হলো পাকিস্তান পেয়েছি। যে আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তান পেয়েছি, সেই মানসিক অবস্থা থেকে জনগণ ও শিক্ষিত সমাজের মত পরিবর্তন করতে সময় লাগবে।’ ৫ বছরের মধ্যে ১৯৫৩ সালে ছাত্রলীগ মুসলিম শব্দ বাদ দিয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মুসলিম শব্দটি বাদ দিতে পেরেছিল জন্মের ৬ বছর পর ১৯৫৫ সালে।

‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যে ছিল তাঁর আদর্শের মূলে তা সহজেই অনুধাবন করা যাবে, তাঁর জীবন ও কর্ম বিবেচনায় নিলে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আওয়ামী লীগ দল গঠন সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে শেখ মুজিব ‘জমিদার, নবাবদের দালানকোঠা থেকে বের করে জনগণের পর্ণকুটিরে’ রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যেতে হবে প্রতিজ্ঞা করে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরাট প্রভেদ রয়েছে। সেখানে রাজনীতি করে সময় নষ্ট করে জমিদার, জায়গিরদার ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আর পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতি করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। …আওয়ামী লীগ দলকে জনগণ ও বুদ্ধিজীবী সমাজ সমর্থন দিল।’ সূচনালগ্নের এ কথা থেকেই বুঝা যায়, আদর্শ হিসেবে তিনি জনগণের সুখ-শান্তি কতটা কামনা করেছিলেন। স্বাধীন স্বদেশে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মন্ত্রিসভার সভাতেই তাই তিনি ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ করেছিলেন। ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’, ‘শোষিতের বিপ্লব’ স্লোগান তুলে অগ্রসর না হয়ে তিনি যদি পাকিস্তানি আমলের মতো বড় বড় ধনী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে থাকতেন, তবে তিনি হত্যার শিকার নাও হতে পারতেন।

প্রকৃত বিচারে আদর্শ বাস্তবায়নের পথে লড়াই করার জন্যই তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। এখনো কানে বাজে বাকশাল গঠনের পর তাঁর সেই উদাত্ত কণ্ঠস্বর : ‘বাংলাদেশের জনগণ সাংঘাতিক রিঅ্যাক্ট করে এটা মনে রাখবেন। সারা জীবন সাধনা করবেন তারপর একটা অন্যায় করবেন। তারপর একটা অন্যায় করলে বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের মুছে দিবে। …আজ আমি গোড়ায় হাত দিয়েছি।’ আদর্শ সুরক্ষা করে এগিয়ে যেতে জাতির শত্রুরা তাঁকে সময় দেয়নি। কিন্তু শত্রুরা বুঝেনি জীবিত মুজিবের চাইতেও একদিন শক্তিশালী হয়ে উঠবেন টুঙ্গিপাড়ায় শায়িত শেখ মুজিব। শেখ মুজিবের মৃত্যু নেই, তিনি সব সময়ে জাতিকে সম্মুখপানে চালিত করবে এজন্য যে, তিনি আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ভিন্ন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে মুজিববর্ষ যখন পালিত হচ্ছে, তখন বিস্মিত ও শঙ্কিত হয়ে ভাবি, ‘জিরো টলারেন্স’ কার্যকর করার জন্য আওয়ামী লীগ সম্মেলনের পর উৎসব পালন সামনে রেখে পাপিয়ার মতো কাণ্ড সংঘটিত হতে পারছে কীভাবে? পাপিয়া ও ওর স্বামী তো একা নয়। কোথায়, কতদূর ছড়িয়ে আছে সেই শিকড়? এসব প্রশ্নের উত্তর মানুষ পাবে কোথা থেকে। গতকাল এক রাজনৈতিক আড্ডায় বলাবলি হলো, মুজিববর্ষের উৎসব সামনে রেখে এখন বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে কি হতো না! দিল্লির কেজরিওয়াল ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ এবং ২০ হাজার লিটার পর্যন্ত পানি ব্যবহারকারী পরিবারকে ফ্রি দেন কীভাবে? ‘বাংলাদেশের জনগণ সাংঘাতিক রিঅ্যাক্ট করে’ কথাটা স্মরণ করা ভিন্ন অন্য আর তেমন কিছু এখন ভাবতে পারছি না।

লেখক : রাজনীতিক।

এইচআর/জেআইএম