দুই দলের মধ্যে শক্তিমত্তার বড় পার্থক্য। বাংলাদেশ যখন ৩২২ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলেছে, হেসেখেলে জয়ই দেখে ফেলেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে উড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে এবার হাল ছাড়লো না। লড়াই করলো শেষ বল পর্যন্ত। শুধু কি লড়াই? আরেকটু হলে তো টাইগারদের হারিয়েই দিয়েছিল।
Advertisement
যদিও শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশই। সিলেটে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শেষ বলের রোমাঞ্চ জিতেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ৪ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটাও ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে।
শেষ ৪৮ বলে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৯৮ রান, হাতে মাত্র ৩ উইকেট। তখন পর্যন্ত তো হেসেখেলেই জেতার পথে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দিকে হঠাৎ স্বাগতিকদের মনে ঢুকে গেল ভয়। জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারের ডোনাল্ড তিরিপানো আর তিনোতেন্দা মুতুমবজি যে চালিয়ে খেলে ম্যাচ প্রায় ঘুরিয়েই দিচ্ছিলেন!
অষ্টম উইকেটে এই যুগল দশের ওপর রানরেটে খেলে দলকে জয়ের বেশ কাছে নিয়ে আসেন। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। শফিউল ইসলামের করা ৪৯তম ওভারে ২ বাউন্ডারিসহ ১৪ রান তুলে নেন তিরিপানো-মুতুমবজি।
Advertisement
শেষ ওভারে দরকার ২০ রান, খুবই সম্ভব। আল আমিন হোসেন আসেন শেষ ওভারটি করতে, যিনি আবার ৯ ওভারে কোনো উইকেট না নিয়ে ৭০ রান দিয়ে বসেছিলেন আগে।
শেষ ওভারে শুরুটা ভালোই ছিল আল আমিনের। প্রথম বলে দিয়েছিলেন এক রান, পরের ডেলিভারি ওয়াইড দিলেও দ্বিতীয় বলে মুতুমবজিকে (২১ বলে ৩৪) লং অনে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে স্বস্তি ফিরিয়েছিলেন এই পেসার।
কিন্তু তৃতীয় বলে বড় এক ছক্কা হাঁকিয়ে দেন তিরিপানো। চতুর্থ বলে আবারও ছক্কা। শেষ দুই বলে দরকার তখন মাত্র ৬ রান। এমন মুহূর্তে পঞ্চম বলটি দারুণ বুদ্ধিমত্তায় বাউন্সার দেন আল আমিন, চলে যায় উইকেটের পেছনে।
শেষ বলে জিম্বাবুয়ের চাই ছক্কা, স্ট্রাইকে সেট ব্যাটসম্যান তিরিপানো। তখনও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ওই বলটি আর আকাশে তুলতে পারলেন না তিরিপানো, এক রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো জিম্বাবুয়েকে। ট্রাজেডি নায়ক হয়ে রইলেন ২৮ বলে ২ চার আর ৫ ছক্কায় ৫৫ রান করা তিরিপানো।
Advertisement
অথচ রান তাড়ায় নেমে একশ রান পার হতেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছিল জিম্বাবুয়ে। ২২৫ রানের মধ্যে হারায় ৭ উইকেট। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য এক লড়াই তিরিপানো-মুতুমবজির। যদিও শেষ রক্ষা হলো না।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্রুতই ওপেনার রেগিস চাকবাকে হারিয়ে বসেছিল জিম্বাবুয়ে। দলীয় ১৫ রানের মাথায় শফিউল ইসলামের বলে আউটসাইডেজ হয়ে কভারে লিটন দাসের সহজ ক্যাচ হন জিম্বাবুইয়ান ওপেনার (২)।
তিনাশে কামুনহুমামুইয়ের সঙ্গে দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। কপাল মন্দ তার, মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত এক ফিল্ডিংয়ে রানআউট হয়ে যান টেলর। শফিউলের করা দশম ওভারের তৃতীয় বলটি মিডঅনে ঠেলে দিয়েই রান নিতে গিয়েছিলেন ১১ রান করা টেলর। এক হাতে বল ধরে আরেক হাতের দুর্দান্ত থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন মিরাজ।
এরপর মিরাজ নিজেই বল হাতে নিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন জিম্বাবুয়ের আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামসকে (১৪)। ৬৭ রানে ৩ উইকেট হারায় সফরকারি দল। সেখান থেকে ১০০ পর্যন্ত নির্বিঘ্নেই গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
দেখেশুনে খেলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন কামুনহুমামুই। কিন্তু তারপরই যেন দায়িত্ব শেষ মনে করেন জিম্বাবুইয়ান ওপেনার। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি তোয়াক্কা না করে হাঁটু গেরে মারতে গিয়েছিলেন, পেছনে চেয়ে দেখেন বল স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছে। ৭০ বলে ৫১ রান করে বোল্ড কামুনহুমামুই। ১০২ রানে তখন ৪ উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের।
এরপর মাদভেরে, সিকান্দার রাজার লড়াই। দুজনই ফিফটি তুলে নেন। কিন্তু দলকে জয়ের সাহস দিয়ে যেতে পারেননি। মাদভেরে ৫২ রানে যখন তাইজুল ইসলামের শিকার হয়েছেন জিম্বাবুয়ের বোর্ডে তখন ১৮৩ রান। এরপর ৫৭ বলে ৬৬ করে মাশরাফি বিন মর্তুজার শিকার হন রাজাও। পরের সময়টা শুধুই তিরিপানো-মুতুমবদজির। শেষটাই শুধু হলো না।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সফল ছিলেন তাইজুল। ৫২ রানে ৩টি উইকেট নেন তিনি। একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি, শফিউল ইসলাম, আল আমিন আর মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে তামিম ইকবালের ১৫৮ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেটে ৩২২ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম ৫৫, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪১ আর মোহাম্মদ মিঠুন ১৮ বলে খেলেন ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস।
এমএমআর/পিআর