দেশজুড়ে

চেয়ারম্যান বাবু হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর : চার্জশিট দেয়নি পুলিশ

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নুর বাবু হত্যার পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও এখনো মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর বিএনপির মিছিলে হামলা চালিয়ে সানাউল্লাহ নুর বাবুকে হত্যা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বড়াইগ্রাম পৌর মেয়র, ৪ জন সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছিলেন। এঘটনায় নিহত বাবুর স্ত্রী মহুয়া নুর কচি বাদী হয়ে ২৭ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ৪৭ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে বাবু হত্যা মামলার সকল আসামি জামিনে রয়েছেন। নিহত বাবুর স্ত্রী মহুয়া নুর কচি বলেন, ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নুর বাবুর নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বনপাড়া বাজারের দিকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বাজারের উত্তর পাশে পৌছলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা ১০/১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে এবং লাঠি সোটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। হামলায় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপির সভাপতি  সানাউল্লাহ নুর বাবু, বড়াইগ্রাম থানা যুবদলের সভাপতি রফিক সরদার, বিএনপি কর্মী আলী, আহত হয়। আওয়ামী লীগ কর্মীরা বাবুকে কুড়ালের গোড়ালি ও লাঠি সোটা দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। উপুর্যপরি আঘাতে বাবু রাস্তার ওপরে লুটিয়ে পড়ে। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন ৪ জন সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান। স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা গুরুতর আহত সানাউল্লাহ নুর বাবু ও থানা যুবদলের সভাপতি রফিক সরদারকে স্থানীয় পাটোয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সানাউল্লাহ নুর বাবু এবং রফিক সরদারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই বাবুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মহুয়া নুর কচি বাদী হয়ে পরদিন ৯ অক্টোবর বড়াইগ্রাম থানায় ২৭ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরো ২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বর্তমানে বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কেএমএ জাকির হোসেন, বনপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন মোল্লা, বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কেএম জিল্লুর রহমান জিন্নাহ, যুবলীগ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু, মাসুদ সোনার, সৈকত, রেজাউল করিম রিকন, ছাত্রলীগ কর্মী রাপ্পু, সেলিম, হাশেম, বাদশাহ, যুবলীগ নেতা গৌতম চন্দ্র বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, রিপন সোনার, মালেক, মাহাবুব, জনি, আশরাফুল ইসলাম মিঠু, হাবিব, মমিন, বাবলু মোল্লা, লুৎফর, বাবু ও আশরাফকে অভিযুক্ত করা হয়। সকলেই আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। মহুয়া নুর কচি জানান, বাবু হত্যা মামলার তদন্ত প্রথমে ডিবি পুলিশ ও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও এই মামলার চার্জশিট প্রদান করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, তিনি বর্তমানে জিডিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পাঁচ বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন না জমা দেয়ায় তিনি এই মামলায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে বাবু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কে আছেন তা তিনি জানেন না। কেউ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেন না বলেও জানান তিনি। বড়াইগ্রাম উপজেলা যুবদল সভাপতি এবং বাবুর হত্যা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রফিক সরদার বলেন, সরকার নিজ দলীয় আসামিদের বাঁচানোর জন্য বাবু হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিচ্ছে না। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা। তবে তিনি বিশ্বাস করেন বাবু হত্যা মামলার বিচার একদিন না একদিন হবেই। অপরদিকে বাবু হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং বনপাড়া পৌর সভার নির্বাচিত মেয়র কেএম জাকির হোসেন তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাবু বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই খুন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনায় জড়িত নেই। তিনি বলেন, বাবু আহত হওয়ার পরে তাকে পাটোয়ারী ক্লিনিকে ও পরে মাইক্রোবাসে অহেতুক বিভিন্নস্থানে ঘুরিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এসময়ে কি ঘটেছে তা জানার জন্য মাইক্রোবাস যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বাবু হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শাহরিয়ার রহমান বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ার কারণে চার্জশিট জমা দিতে দেরি হচ্ছে। তবে এই মামলার তদন্ত কাজ অল্পদিনেই শেষ হবে বলেও জানান তিনি।রেজাউল করিম রেজা/ এমএএস/এমএস

Advertisement