সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণতন্ত্রের জন্ম নিয়ে সক্রেটিস, প্লেটো, হেরোডটাসকে কেন্দ্র করে বইমেলায় সাড়া জাগায় বাংলাদেশি কূটনীতিক সুজন দেবনাথের উপন্যাস ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’। অন্বেষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু।
Advertisement
সাহিত্য, ট্রাজেডি ও কমেডি নাটক, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণতন্ত্র, দর্শন, চিকিৎসা শাস্ত্র কিভাবে শুরু হলো, কারা শুরু করলো- সেটি নিয়ে এ চমৎকার উপন্যাসকে ঘিরে পাঠকদের উচ্ছ্বাস ছিল লক্ষ্য করার মতো। লেখক সুজন দেবনাথ বিজ্ঞান, দর্শনের মতো জটিল বিষয়কে সুখপাঠ্য একটিমাত্র গল্পে নিয়ে এসেছেন। হাসি-কান্নার মিশেলে চমৎকার গল্পে পুরো গ্রিসের ক্ল্যাসিকাল সময়কে তুলে ধরেছেন। তার এই মুন্সীয়ানা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। বইয়ের নামটিও বেশ মনে ধরার মতো। একবার শুনলেই মনে থাকে। সক্রেটিস হেমলক নামের বিষ পান করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, সেটি থেকেই বইয়ের নাম ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’।
সক্রেটিসের সময় থেকে যারা-ই জ্ঞানের জন্য আত্মনিয়োগ করেছেন, তারা-ই কোনো না কোনোভাবে ভয়াবহ বিপদে পড়েছেন। তাদের জন্য অজান্তেই প্রস্তুত হয়েছে এক পেয়ালা হেমলক। যারা অজানাকে জানতে চেয়েছেন, তারাই হেমলকের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবু পথ ছাড়েননি পৃথিবীর জ্ঞান পিপাসুরা। হেমলকপ্রেমীরাই পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাভাষি সব হেমলকপ্রেমীর জন্য লেখা হয়েছে ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ উপন্যাসটি।
কয়েকজন প্রতিভাবান মানুষ অদ্ভুত এক পাগলামি শুরু করেছিল। তাদের পাগলামিতে মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে জন্ম হয়েছিল সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণতন্ত্র, চিকিৎসা, দর্শনসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সবকিছু। অন্ধকার থেকে জন্ম নিয়েছিলো আলো। এটি ঘটেছিল প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এথেন্স নামের ছোট্ট একটি শহরে। তাদের সেই পাগলামি আর আলোর জন্মকথা একটি মাত্র গল্পে নিয়ে এসেছেন তিনি। এ বইয়ে আড়াই হাজার বছর আগের সক্রেটিস, প্লেটো, হেরোডটাসরা রক্ত-মাংসের মানুষ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
Advertisement
এ গল্পে সক্রেটিস দুষ্টুমি আর রসিকতায় সুন্দর জীবনের কথা বলছেন। সেই রসিকতা থেকেই প্লেটো শিখছেন জীবন কী? একইসাথে সক্রেটিস তুমুল প্রেমিক মানুষ। তিনি স্ত্রীর সাথে খুনসুটি করছেন, করছেন তুমুল ঝগড়া। চুপিচুপি গল্প করছেন সময়ের সবচেয়ে বুদ্ধিমতী মেয়ে আসপাশিয়ার সাথে। এক বয়সী নারীর কাছে শিখছেন- প্রেম কী জিনিস। আসামী হয়ে দাঁড়িয়েছেন আদালতে। শান্তভাবে চুমুক দিচ্ছেন হেমলক পেয়ালায়। প্লেটো খুঁজে পাচ্ছেন- শরীরের আকর্ষণ ছাড়া সাধু সন্ন্যাসী ধরনের এক প্রেম। যার নাম প্লেটোনিক প্রেম। রাগে-দুঃখে কবি প্লেটো তার কবিতা, নাটক সব পুড়িয়ে দিচ্ছেন- হয়ে যাচ্ছেন কঠিন এক দার্শনিক। প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবি-সাহিত্যিকদের নির্বাসন দিচ্ছেন।
এথেন্সের মানুষ আবিষ্কার করছে গণতন্ত্র। একটি পাহাড়ের উপরে বসছে পৃথিবীর প্রথম সংসদ। সেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উচ্চারিত হচ্ছে সমান অধিকারের কথা, আইনের শাসনের কথা। সক্রেটিস যাচ্ছেন সেই গণতন্ত্র দেখতে। তার ভালো লাগছে না। তার ভালো না লাগাটা ছড়িয়ে পড়ছে প্লেটোর মধ্যে।
বিজ্ঞানের জনক থেলিস বের করছেন- পৃথিবীর প্রথম যুক্তি। পিথাগোরাস বের করছেন জ্যামিতির সূত্র, গোল্ডেন রেশিও। সেসব ব্যবহার করে স্থপতি ও ভাস্কর ফিডিয়াস ডিজাইন করছেন দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ভবন পার্থেনন। নগর পরিকল্পনা শাস্ত্রের জনক হেপোডেমাস বের করলেন প্রথম গ্রিড প্লান নির্ভর নকশা। ইতিহাসের জনক হেরোডটাস এথেন্সে সফোক্লিসের কাছে আসছেন। তিনি লিখতে শুরু করেছেন- পৃথিবীর প্রথম ইতিহাস বই। শুরু হলো পৃথিবীর প্রথম সভ্য লড়াই, রক্তপাতহীন লড়াই- অলিম্পিক গেমস। সেই অলিম্পিক গেমসে গিয়ে হেরোডটাস বলছেন এথেন্সের কাহিনি। বলছেন ম্যারাথন যুদ্ধের কথা।
এমন চমৎকার সব গল্পকে একটি কাহিনিতে ধারণ করে বাংলাভাষি পাঠকদের কাছে নিয়ে এসেছেন সুজন দেবনাথ। তিনি গ্রিসে ইতোমধ্যেই প্রাচীন গ্রিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। ‘ফ্রেন্ডস অব সক্রেটিস’ নামে এথেন্সের একটি সংগঠন থেকে বইটি প্রকাশ নিয়ে লেখককে ইতোমধ্যে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। গবেষণা আর ইতিহাসের মিশ্রণে লেখা এ গল্প বাংলা ভাষায় একেবারেই নতুন। পাঁচশ আটাশ পৃষ্ঠার বইটি ৬০০ টাকা মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনেও।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম