জাতীয়

অন্ধকার সড়কে বাড়ছে ছিনতাই, যা বলল পুলিশ

ভুতুড়ে রাস্তা, ল্যাম্পপোস্ট আছে বাতি নেই। ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার- নগরীর এমন বেশকিছু এলাকার অলিগলিতে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বাড়ছে। দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা ও নজর দিতে হবে। অন্যথায় পুরোপুরি অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়— এমন মন্তব্য করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।

Advertisement

গতকাল শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) একযোগে অভিযান চালিয়ে ৪২ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ৮৫টি ছিনতাই হওয়া মোবাইল, চাপাতি ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে পরিচালিত অভিযান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। তার দাবি, গ্রেফতার সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বাতেন আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগর এলাকার রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট আছে। সেগুলোর বেশিরভাগই নষ্ট। গলিগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন। এতে ওইসব এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। যেসব এলাকায় এমন অবস্থা, আমাদের দায়িত্বশীলদের নজর দেয়া দরকার। লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি এ ধরনের এলাকার সড়কে এবং অলিগলিতে সতর্কতার সঙ্গে চলাচলেও নগরবাসীকে আহ্বান জানান তিনি।

Advertisement

এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা সুযোগ পেলেই ছিনতাই করে। তাদের আইনের আওতায় এনে পূর্ণাঙ্গ সাজার ব্যবস্থা না করা হলে অপরাধ কমানো সম্ভব হবে না। বেশিরভাগ সময় বাস-লঞ্চ টার্মিনাল এবং অন্ধকার গলিতে ছিনতাই হয়। সেটা গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত।’

বসুন্ধরা, মোতালেব প্লাজায় ছিনতাই হওয়া মোবাইলের পার্টস বিক্রি প্রসঙ্গে আব্দুল বাতেন বলেন, ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলো কোথায় যায়— এটা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, ছোটখাটো যে মোবাইল পার্টসের দোকান আছে তারা এসব চোরাই মোবাইল কেনেন। এর মধ্যে বসুন্ধরা, মোতালেব প্লাজার অনেক দোকানদার রয়েছেন।

‘চোরাই মোবাইলগুলো সরাসরি মানুষের কাছে বিক্রি করা হয় না। কারও মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে চোরাই মোবাইলের পার্টস খুলে বিক্রি করা হয়। এসব পার্টস বিক্রি করলে যে লাভ হয় তা মোবাইল বিক্রি করলেও হয় না।’

চোরাই মোবাইল বিক্রি ও কেনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। অচিরেই সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হবে- যোগ করেন তিনি।

Advertisement

‘বড় বড় মার্কেটের যেসব ব্যবসায়ী এসব মোবাইল বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত তাদের বলতে চাই, এটা অপরাধ। এসব কাজে অবশ্যই আপনারা (ব্যবসায়ী) সতর্ক হন। কারণ আমাদের এ অভিযান চলবে। ফলে ছিনতাইকারী বা টানা পার্টি, যারা আছে তাদের আধিপত্য কমবে।’

সাংবাদিকরা এ সময় প্রশ্ন রাখেন, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই বেশি হয়, এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। উত্তরে বাতেন বলেন, ‘যে সময়গুলোতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটে তা বন্ধ করতে আমরা বাস-লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে পেট্রোল টহল জোরদার করব, সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে ওইসব এলাকায় চিহ্নিত ছিনতাইকারী যারা, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

ডিবির অভিযানের সময়ই মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা ঘটে রাজধানীতে। শনিবার ভোরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তারিনা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূ। ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার সময় বাধা দেন তিনি। এ সময় রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তারিনা বেগম। তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাতেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করছি। এ ব্যাপারে মামলা হবে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে।’

ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরবাসী মামলা করতে নিরুৎসাহিত হন- এর কারণ কী, এখানে পুলিশের কোনো দায় আছে কিনা? উত্তরে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘দায় বললে হবে না, এটা দায়িত্বশীলতা। নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব- কোথাও কোনো অপরাধ হলে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয়া। অভিযোগ ছাড়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব হয় না অপরাধ সম্পর্কে জানা কিংবা অপরাধীকে শনাক্ত করা। নগরবাসীকে বলতে চাই, আপনারা থানায় যাবেন, অভিযোগ দেবেন। থানা যদি মামলা বা অভিযোগ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে, আমাদের ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

জেইউ/এমএআর/এমএস